তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের উড়ন্ত সূচনা আর সাকিব, সাব্বির, নাসিরের দৃঢ়তায় প্রথম ওয়ানডেতে টাইগাররা সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৪৯.৪ ওভারে ৩০৭ রান করে। জিততে হলে ভারতকে করতে হবে ৩০৮ রান।
তামিম ৬০, সৌম্য ৫৪, সাকিব ৫২, সাব্বির ৪১ আর নাসির ৩৪ রান করলে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে টাইগারদের ইনিংস সর্বোচ্চ স্কোর দাঁড়ায়। এর আগে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৯৬ রান (২০১০ সালের জানুয়ারিতে)।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বিকেল ৩টায় সফরকারী ভারতের বিপক্ষে বদলে যাওয়া টাইগার বাহিনী ব্যাটিংয়ে নামে। স্বাগতিকদের হয়ে ব্যাটিং সূচনা করতে আসেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। আর ভারতের বোলিং উদ্বোধন করেন ভুবনেশ্বর কুমার। বিকেল ৪টার কিছু পর বৃষ্টি নামলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির আগে বাংলাদেশ ১৫.৪ ওভার ব্যাট করে সৌম্যর উইকেটটি হারিয়ে তোলে ১১৯ রান।
এর আগে তামিম আর সৌম্যর ব্যাটে ভর করে মাত্র ৮০ বলে দলীয় শতক পার করে টাইগাররা। এরপরই রান আউট হয়ে ফিরে যান সৌম্য সরকার। ৩৮ বলে ৮ চার আর এক ছয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকান সৌম্য। তবে, ৪০ বল খেলে ৫৪ রান করে বিদায় নেন তিনি। আউট হওয়ার আগে তামিমের সঙ্গে ১০২ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। যা ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি।
বৃষ্টির কারণে খেলা প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবারো শুরু হয়। এরপর টাইগারদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে। সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। ব্যক্তিগত ৬০ রান করে অশ্বিনের বলে রোহিত শর্মার তালুবন্দি হন তামিম। আউট হওয়ার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০তম অর্ধশতক হাঁকান দেশসেরা এ ওপেনার।
দলীয় ১৯.৪ ওভারে আর ১২৯ রানের মাথায় অশ্বিনের বলে এলবি’র ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন অভিষিক্ত লিটন। অভিষেক টেস্ট ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করলেও ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন লিটন।
তামিম আর সৌম্য ব্যক্তিগত অর্ধশতক করে ফিরে গেলে লিটন তার অভিষেক ম্যাচে ব্যর্থ হন। এরপর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে লংঅনে ধরা পড়েন মুশফিক। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন মুশফিক-সাকিব। তবে, ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে রোহিত শর্মার হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। অপ্রয়োজনীয় শট খেলে অশ্বিনের বলে আউট হওয়ার আগে ১৪ রান করেন মুশফিক।
দলীয় ১৪৬ রানের মাথায় টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর স্বাগতিকদের বেশ ভালো ভাবেই টেনে নিয়ে চলেন সাকিব-সাব্বির। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতকের দিকে ছুটতে গিয়ে ১৫ ওয়ানডে খেলা সাব্বির ব্যক্তিগত ৪১ রান করে বিদায় নেন। জাদেজার বলে বোল্ড হওয়ার আগে সাব্বির ৪৪ বলে ৫টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান। ঘুরে দাঁড়িয়ে সাকিব-সাব্বির মিলে ৮৩ রানের জুটি গড়েন।
সাব্বির রহমানের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি গড়েন নাসির হোসেন। ভারতীয় বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে ব্যাট করতে থাকা সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৯তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে উমেশ যাদবের লাফিয়ে উঠা বলে শট নিয়ে জাদেজার হাতে ধরা পড়েন। আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৫২ রানের একটি ইনিংস খেলেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে ৩৮ রানের জুটিও গড়েন সাকিব।
সাকিব আল হাসান ফিরে গেলেও থেমে থাকেনি টাইগারদের রানের চাকা। নাসির হোসেন নিজের পুরোনো রূপে ফিরে ২৭ বলে তিন চার আর এক ছয়ে ৩৪ রান করেন। উমেশ যাদবের বলে জাদেজার তালুবন্দি হন নাসির। এরপর রুবেল হোসেন ফিরে যান ব্যক্তিগত ৪ রান করে।
শেষ দিকে ব্যাটে ঝড় তুলে মাশরাফি খেলেন ২১ রানের ইনিংস।
বিশ্বকাপের দুই কোয়ার্টার ফাইনালিস্টদের হাইভোল্টেজ এ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
ওয়ানডেতে ২৯ বারের মোকাবেলায় টাইগাররা ভারতকে তিনবার হারিয়েছে। ৠাংকিংয়ে ভারতের অবস্থান দুই, বাংলাদেশের আট। তবে ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে টাইগারদের সাম্প্রতিক ফর্ম ও আত্মবিশ্বাস সফরকারীদের এতোটুকুও ছাড় দেবে না। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে একটি ম্যাচ জিতলেই ওয়ানডে ৠাংকিংয়ে এক ধাপ এগিয়ে সাত নম্বরে উঠে যাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাশ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।
ভারত দল: শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব ও মোহিত শর্মা।