এ যেন ঈদের আগেই ঈদ এসে গেল বাংলাদেশের জন্য। ঈদ আসতে এখনো তিন-চারদিন বাকি রয়েছে। তবে ঘরের মাঠে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে মাশরাফি বাহিনী গোটা বাংলাদেশকে যেই আনন্দ উপহার দিয়েছে সেটা ঈদের আনন্দের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বুধবার সিরিজ-নির্ধারণী ম্যাচে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ এ জয় করে নেয় টাইগার শিবির।
বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারাতে পারে সেটা মাস খানেক আগেও হয়তো ‘কট্টর’ কোনো বাংলাদেশি সমর্থকও কল্পনা করেননি। কিন্তু হ্যা, বাস্তবে এটিই ঘটলো, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে তারা এখন কাউকেই পরোয়া করে না। ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলা মাশরাফির দল যে ক্রিকেটবিশ্বে নতুন এক শক্তি হয়ে উঠছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্বকাপ থেকেই অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে শুধু টাইগার সমর্থক নয়, গোটা ক্রিকেটবিশ্বকেই মোহিত করে রাখছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ (৩-০) করে বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রার শুরু। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় যে ‘ফ্লুক’ ছিল না, এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে মহেন্দ সিং ধোনির শক্তিশালী ভারতকে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে সেটি প্রমাণ করেছে টাইগাররা।
পরপর দুই সিরিজে পাকিস্তান ও ভারতকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ বাংলাদেশের কাছে এক চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জের শুরুতে বাংলাদেশ প্রোটিয়াদের কাছে পাত্তা পায়নি। দুই ম্যাচ টি-২০ সিরিজের দুটিতেই বাংলাদেশকে সহজের হারানোর পর প্রথম ওয়ানডেতেও মাশরাফিদের পাত্তা দেয়নি প্রোটিয়ারা। সফরকারীরা প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দেয়।
তবে এই বাংলাদেশ যে সেই আগের বাংলাদেশ নেই পরের দুটি ম্যাচেই প্রমাণ করে দিয়েছে তারা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনার পর বুধবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে প্রোটিয়াদের স্রেফ উড়িয়ে দেয় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ফলে ক্রিকেটবিশ্বে যে বাংলাদেশ নতুন এক পরাশক্তি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সেটি এখন কারো বুঝতে আর অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।
বৃষ্টি-বিঘ্নিত ৪০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশকে মাত্র ১৭০ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিতে সক্ষম হয় সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। লক্ষ্য ছোট হলেও মরনে মরকেল ও ইমরান তাহিরদের বিপক্ষে যে সেটা খুব একটা সহজ হবে না তেমন ধারণাই ছিল অনেকের। কিন্তু এ যে বদল যাওয়া বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ দলে এখন আর নায়কের অভাব নেই। সৌম্য সরকাররা যেখানে সাকিব আল হাসানদের ছাপিয়ে যাচ্ছেন প্রতি ম্যাচেই। সেই বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি প্রোটিয়ারা। সফরকারীদের রীতিমতো তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন সৌম্য-তামিম-সাকিবরা।
১৭০ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে ওপেনিং জুটিতে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার ১৫৪ রান করেন। ম্যাচ তো সেখানেই কার্যত শেষ, শুধু বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতার। দলীয় ১৫৪ রানে সৌম্য ৯০ রান করে ফিরে গেলে মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে সেই আনুষ্ঠানিকতাটুকুও সেরে ফেলেন তামিম ইকবাল।
সৌম্য সরকার ৯০ ও তামিম ইকবাল ৬১ রানের দারূণ ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশ ৯ উইকেট ও ৮৩ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে টাইগার শিবির। প্রোটিয়া বোলারদের তুলোধুনো করে
এর আগে বুধবার বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ ৪০ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। তবে বৃষ্টির আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনাশ করে দেন সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ২৩ ওভারের সময় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ৪ উইকেটে ৭৮। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর খেলা শুরু হলে ম্যাচ ৪০ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু টাইগার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত ও আগ্রাসী বোলিংয়ের কারণে ৪০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১৬৮ রান তুলতে সক্ষম হয় প্রোটিয়া। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা ১৬৯ না হয়ে হয় ১৭০।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের নায়ক কে? ৮ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেয়া সাকিব নাকি ৮ ওভারের স্পেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে মাত্র ২৯ রানে ২ উইকেট নেয়া মুস্তাফিজুর রহমান? শেষ দিকে ২ উইকেট নেয়া রুবেলের অবদানও কিন্তু কম নয়। এছাড়া প্রয়োজনের সময় মাশরাফি ও মাহমুদুল্লাহ ১টি করে উইকেট নিয়ে নিজেদের কাজটুকু ঠিকমতো সেরে রাখেন।