দুই আয়োজকের স্বপ্নের ফাইনাল

ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই জয়। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ‘অপরাজেয়’ তকমা অনেকেরই ভ্রু-কুঁচকে দেয়। এর পরও টেনশনে ছিলেন দলটির ভক্তরা। তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে দীর্ঘ তিন মাসের অস্ট্রেলিয়া সফরে জয়ের মুখ না দেখা ভারতের বিশ্বকাপ নৈপুণ্য। সাত ম্যাচের সাতটিতেই জয়ী বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের তোয়াক্কা না করে উপায়ও ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। এর ওপর, ম্যাচের শুরুতেই ‘জুয়া’ খেলে বসেন দলটির অধিনায়ক মাইকেল কার্ক! গত বিশ্বকাপের পর সিডনিতে অনুষ্ঠিত ১২ ওয়ানডে ম্যাচের সাতটিতেই জিতেছে পরে ব্যাটিং করা দল। তিনটিতে হয় প্রথমে ব্যাট করা দলের। ভেনুর ওই পরিসংখ্যানের পরও টস জিতে কার্কের প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত স্নায়ুচাপ বাড়াল অস্ট্রেলিয়ার ভক্তদের। পরে ব্যাট করে ভারতের ঈর্ষনীয় সাফল্যও অনেকের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়। তবে আত্মবিশ্বাসী কার্ক কোনো ভুল করেননি, তা প্রমাণ করতে টিম অস্ট্রেলিয়ার বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়েনি। অ্যারন ফিঞ্চ-স্মিথের নান্দনিক ব্যাটিংয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা নিজেদের উজাড় করে কারিশমা দেখাতে সক্ষম হলেন। স্বাগতিক ক্রিকেটারদের দাপটে গতকাল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিতে খুঁজেও পাওয়া গেল না বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে। অসহায়ের মতো হেরে গুডবাই জানাতে বাধ্য হয়েছে এশিয়ান জায়ান্টরা। তাদেরকে ৯৫ রানের হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়া। দলটি টুর্নামেন্টের প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে। আগামী রোববার ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত ভেনু এমসিজি অর্থাৎ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায়। চলমান বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ডের জমজমাট লড়াই ভক্তদের অসামান্য আনন্দ দেয়। দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও নাটকীয়তায় ভরপুর থাকবে বলে সবাই প্রত্যাশা করেন। তবে সিডনিতে ভারত অসহায়ের মতোই হারল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে। আলোচিত ব্যাটিংলাইন থাকার পরও এশিয়ান দলটি সফলতা পায়নি অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিপক্ষে। অথচ একই উইকেটে ভারতীয় বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করেন স্টিভে স্মিথ-ফিঞ্চ ও মিচেল জনসন। তাদের অ্যাটাকিং ব্যাটিংয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের সর্বোচ্চ সংগ্রহও (৩২৮/৭) স্কোরবোর্ডে দাঁড় করায়। ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো না হলেও দ্বিতীয় উইকেটে স্মিথ-ফিঞ্চের ১৮২ রানের জুটিই মুখ্য ভূমিকা রাখল বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়ায়। ৯৩ বলে ১০৫ রানের স্মরণীয় ইনিংস খেলেন স্মিথ। ফিঞ্চের ৮১ রানের উইলো এলো ১১১ বল মোকাবেলায়। শেষদিকে পেসার জনসনের ৯ বলে অপরাজিত ২৭ রানে-ই ম্যাচের এক্স ফ্যাক্টরে পরিণত হয়। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের দুই ওপেনার একটি করে নতুন জীবন পাওয়ার পরও কোনো ফায়দা তুলতে ব্যর্থ হলেন। কেউ ফিফটিও পাননি। দলটির মিডলঅর্ডারের ব্যাটসম্যানেরাও চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেন টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো শক্তিশালী বোলিং লাইনের মোকাবেলায়। কোহলি-রায়না আউট হলেন দুই অঙ্কের কোটায় পা রাখার আগেই! তাদের দু’জনের সাজঘরে ফেরার পর ভারতের পরাজয়ও পরিণত হয় সময়ের ব্যাপারে। শেষ পর্যন্ত ধোনির ৬৫ রানের ইনিংস দলটির হারের ব্যবধান-ই কমালো মাত্র! ১৯ বল বাকি থাকতে ভারত অলআউট ২৩৩ রানে। অথচ ভেনুর সাম্প্রতিক ম্যাচের ফলাফল ও ভারতের রান চেজের অতীত অসিদের চাপে রাখল বোলিংয়ের সূচনায়। পর পর দু’টি ক্যাচ মিসে কার্কের কপালে চিন্তার ভাঁজও দেখা মিলল। তবে স্টার্ক-জনসন ও ফকনার প্রয়োজনের মুহূর্তে ঠিকই সেরা ডেলিভারিগুলো বের করে আনতে সক্ষম হলেন। অস্ট্রেলিয়াও জিতল। ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অপরাজেয় রেকর্ডও ধরে রাখল। এখন তাদের সামনে সুযোগ পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ের। নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেই অসি ক্রিকেটারেরা স্বপ্ন পূরণের জয়োৎসবে মেতে উঠতে পারবেন। ১১তম বিশ্বকাপ শুরুর আগে দুই যৌথ আয়োজকের (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড) ফাইনালে অংশগ্রহণের পক্ষে অনেকেই বাজি ধরেন। শেষ পর্যন্ত ওই দল দু’টিই উঠল স্বপ্নের শিরোপা লড়াইয়ে এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই তারা পেল ফাইনালের টিকিট। টানা আট ম্যাচ জিতেই নিউজিল্যান্ড নিশ্চিত করেছে শিরোপা লড়াইয়ের টিকিট। গ্রুপপর্বে তারা হোম ভেনুতে অসিদেরও হারিয়ে দেয়। এ দিকে গ্রুপপর্বের পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জয়ী অস্ট্রেলিয়া দাপটের সাথেই জিতল নকআউটের দুই ম্যাচ। বিগ ম্যাচের স্নায়ুচাপ সামলানোর অসাধারণ সক্ষমতার কারণে ফাইনালে ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে অসিরা।

Exit mobile version