নাদিয়া নাদিম একজন বিশ্বসেরা ফুটবলার। এই উদ্বাস্তু আফগান নারী এখন ডেনমার্ক জাতীয় দলের ফুটবল খেলোয়াড়। পারি সাঁ-জেরমাঁর নারী দলের স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন। শরণার্থী শিবির থেকে বিশ্বের প্রভাবশালী নারী ফুটবলার উঠেছেন তিনি।
নাদিয়া নাদিম আফগানিস্তানের তালেবানদের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে এখন ডাক্তার ও বিশ্বখ্যাত ফুটবলার। তার শূন্য থেকে শিখরে ওঠার সংগ্রামী জীবন, অনেক কিশোরী-তরুণীদের অনুপ্রাণিত করেছে।
শরণার্থী শিবির থেকে তার বিশ্বসেরা হওয়া রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। আফগান শরণার্থী থেকে ফুটবল তারকা নাদিয়া নাদিম অনুপ্রেরণার এক অসাধারণ গল্প।
নাদিয়া নাদিমের জন্ম
নাদিয়া নাদিমের জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৮৮, আফগানিস্তানের হেরাত শহরে। তার পিতা নাদিম আফগান ন্যাশনাল আর্মির জেনারেল ছিলেন। কিন্তু তালেবানের হাতে ধরা পরার পর হত্যা করা আফগান সেনাবাহিনীর এই সদস্যকে।
নাদিয়া নাদিমের প্রাথমিক জীবন
আফগানিস্তানে বেড়ে উঠেন নাদিয়া নাদিম। ২০০০ সালে তালেবান গোষ্ঠী নাদিয়ার বাবাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। আর ফেরত আসেননি নাদিয়ার বাবা।
পরবর্তীতে তার পিতাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। পিতা নিহত হবার পরই তার জীবনে নেমে আসে দুঃখ-দুর্দশা। বাবাকে মেরে ফেলার সময় নাদিয়ার বয়স ছিল ১২ বছর।
সে সময় খুব সহজেই হয়তো জীবনটা চলে যেতে পারতো তার। কিন্তু নাদিয়া বেঁচে গেলেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে তালেবানদের হাতে বাবা নিহত হলে জীবন কঠিন হয়ে পড়ে। বাবার মৃত্যুর পর জীবন হয়ে যায় কঠিন।
যার শৈশবটা কেটেছে আফগান-তালেবান যুদ্ধের ভেতর, তালেবান সৈন্যদের বুলেটে তিনি হারিয়েছেন বাবাকে।দুঃস্বপ্নের জীবন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসা অন্যতম এক নাম নাদিয়া নাদিম।
আফগানিস্তান ছেড়ে ডেনমার্কে নাদিয়া নাদিম
বাবাকে হত্যা করার পরপরই পুরো পরিবার আফগানিস্তান ছেড়ে শরণার্থী হওয়ার পরিকল্পনা নেয়। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও সন্তানদের নিয়ে দেশ ছাড়েন মা হামিদা। মায়ের হাত ধরে দেশ ছেড়েছেন নাদিয়াও।
বয়স ১২ না হতেই মা আর চার বোনের সঙ্গে জাল পাসপোর্ট বানিয়ে পাকিস্তান যান। পালিয়ে বেড়িয়েছেন পাকিস্তানের শহর থেকে শহরে।
পাকিস্তান কিছুদিন পালিয়ে বেড়ানোর পর জাল পাসপোর্ট বানিয়ে পাকিস্তান থেকে ইতালি আসেন।
সেখান থেকে ডেনমার্ক হয়ে ইংল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও মা হামিয়া ডেনমার্কেই আবাস গড়েন নাদিয়াদের নিয়ে। মিনি যান ও ট্রাকে চেপে দীর্ঘ দুর্গম পথ পারি দিয়ে নাদিয়ার পরিবার ডেনমার্কে পাড়ি জমিয়ে দেখতে পান সেখানে আরো অনেক আফগানের বাস। তারাও উদ্বাস্তু।
পুরো পরিবার নিজের জন্মভূমি ছেড়ে ডেনমার্কে পালিয়ে যাবার পর নতুন বাস্তবতায় শুরু হয় নবজীবন। জীবনের নবতর এই অধ্যায়টি ছিল নতুন অভিজ্ঞতা ও নতুন করে জীবন শুরু করার এক নতুন প্রত্যাশা।
শরণার্থী শিবিরে নাদিয়া নাদিম
নাদিয়া নাদিম জীবনের তাগিদে ডেনমার্কে যাবার পর আশ্রয় পান সেখানকার শরণার্থী শিবিরে। ফুটবলার হওয়ার পেছনেও রয়েছে একটি তুমুল সংগ্রামী জীবনের গল্প। হঠাৎ আলোচনায় উঠে এসেছেন আফগান বংশোদ্ভূত এই ডেনিস নারী।
ডেনমার্ককে তিনি এখন নিজের ঘর বলেই মানেন। আফগানিস্তানের যুদ্ধ-বিগ্রহের দিনগুলো পেছনে ফেলে এসে নাদিম পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন এখানেই। আবিষ্কার করেছিলেন খেলাধুলার অবারিত দুনিয়া। অবশেষে না পাওয়া শৈশবের আনন্দটা ধরা দিয়েছিল নাদিয়ার কাছে।
নাদিয়ার শিক্ষাজীবন ও পারদর্শিতা
নাদিয়া নাদিম শুধু একজন ফুটবলারই নন, একজন ডাক্তারও। তিনি একজন মেডিকেল সার্জন। খেলার পাশাপাশি তিনি এই ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
কথা বলতে পারেন মোট ১১টি ভাষায়। ভাষাগুলো হচ্ছে- ডেনিশ, ইংরেজি, স্পেনীয়, ফরাসি, জার্মান, ফার্সি, দারি, উর্দু, হিন্দি, আরবি ও লাতিন।
নাদিয়া নাদিমের ফুটবলে হাতেখড়ি
ডেনমার্ক স্কুলে ফুটবলে হাতেখড়ি এই আফগান নারীর। ওই সময়ে বলে লাথি মারা, এর পেছনে ছোটা এবং গোলের চেষ্টা করাই ছিল তার ফুটবল খেলা।
তখন ডেনমার্কের এক স্থানীয় কোচের নজরে পড়েন নাদিয়া। মায়েরও পুরোপুরি সমর্থন ছিল, যা তাকে আজ ফুটবলার হতে সাহায্য করেছে।
নাদিয়া নাদিমের ফুটবল ক্যারিয়ার
ডেনমার্কে শরণার্থী শিবিরে তিনি তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০১২ সালে ফোরচুনা হজরিংয়ে যাওয়ার আগে, তিনি বি ৫২ অ্যালবুর্গ, টিম ভিবুর্গ এবং আই কে স্কোভাকাকেনের হয়ে খেলতেন।
একই বছরের সেপ্টেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তার অভিষেক হয়, স্কটিশ চ্যাম্পিয়ন্স গ্লাসগো সিটির বিপক্ষে তার দল ২-১ গোলে জয়ী হয়। ২০০৯ সালে নাদিয়ার ডেনমার্ক জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটে।
স্কাই ব্লু এফসিতে নাদিয়া নাদিম
২০১৪ এনডব্লিউএসএল মৌসুমের শেষের দিকে নাদিম এনডব্লিউএল ক্লাব স্কাই ব্লু এফসিতে যোগ দেন। ঐ মৌসুমের ৬ ম্যাচে তিনি ৭টি গোল করেন এবং ৩টি গোলে সহায়তায় করেন।
১৯ আগস্ট তাকে সপ্তাহের সেরা খেলোয়াড় এবং ১৪ আগস্ট এনডব্লিউএসএলের মাসের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে, স্কাই ব্লু ঘোষণা করে যে ২০১৫ মৌসুমেও নাদিম স্কাই ব্লুর হয়ে খেলবে।
নাদিয়া নাদিম পোর্টল্যান্ড থর্নস এফসিতে
১৪ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে, নাদিম পোর্টল্যান্ড থর্নস এফসিতে স্ট্রাইকার হিসাবে যোগ দেন। তিনি লীগে ঐ মৌসুমের সেরা স্কোরার ছিলেন এবং তার দল ২০১৬ সালের সিএসডির শিরোপা জয়লাভ করে।
২০১৭ মৌসুমে, তিনি লীগে তার দলকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন এবং এনডব্লিউএসএল চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ে সহায়তা করেন।
নাদিয়া নাদিমের ব্যক্তিগত তথ্য
নাদিয়া নাদিমের উচ্চতা ১.৭৫ মিটার তথা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। মাঠে অবস্থান হচ্ছে- ফরোয়ার্ড। বর্তমান ক্লাব হচ্ছে- পারি সাঁ-জেরমাঁর মহিলা দল। তার জার্সি নম্বর ১০।
তিনি অর্থের জন্য খেলেন না এবং ডাক্তার হিসাবে তার ভবিষ্যত কর্মজীবন থেকে তিনি লক্ষ লক্ষ উপার্জন করবেন বলে জানিয়েছেন।
সেরা নারী খেলোয়াড়ের তালিকায় নাদিয়া
বিশ্বের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফোর্বসে নাদিয়া নাদিমের ফুটবলার ওঠে ওঠার পেছনে এমনই গল্প উঠে এসেছে। এই ম্যাগাজিনের মোস্ট পাওয়ারফুল ওমেন ইন ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টসের তালিকায় উঠে এসেছে নাদিয়া নাদিমের নাম।
নাদিম তার উদ্যমী ও দৃঢ় প্রত্যয়ী খেলার জন্য স্বীকৃত।
ইউরোপে তুমুল জনপ্রিয় নাদিয়া
ইউরোপের নারী ফুটবলের খোঁজখবর যারা রাখেন তাদের কাছে নাদিয়া নাদিমের নামটা নতুন নয়। নারী ফুটবল অনুরাগী অথচ নাদিয়া নাদিমের নাম শোনেননি, এমন একজনও হয়তো পাওয়া যাবে না।
ডেনমার্কের এই তারকা ফরোয়ার্ড, জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য। ইউরোপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আফগান এই নারী ফুটবলার। নাদিয়া নাদিম এমন একটি নাম যা শুনলে কেউ ইউরোপে নারীদের ফুটবল অঙ্গনের কথাই স্মরণ করে।
এখন আর তিনি আফগানি নন, ডেনিস। গোটা ইউরোপ জুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে নাদিয়া নাদিমের। নিজ জন্মভূমি থেকে পালিয়ে আসা সেই মেয়েটি নাদিয়া এখন যারা হাজারও প্রতিকুলতার মাঝে স্বপ্ন অর্জন করতে চান তাদের কাছে রোল মডেল।
নাদিয়া নাদিম সম্পর্কে জানুন ভিডিওতে
যেভাবে ফুটবলে আগ্রহী নাদিয়া
বয়সে তখন খুব ছোট নাদিয়া নাদিম। তার বাবা তখন ঘরে একটি ফুটবল নিয়ে এসেছিলেন। ঘরের দুই সন্তান নাদিয়া ও তার বোন বুঝতেন না ফুটবল খেলা কী। ফলে বলটি ছুড়তেন আর ধরতেন দু’জন মিলে। কে জানত এরপর ফুটবলারই হবেন নাদিয়া। তাও আবার উদ্বাস্তু হিসেবে।
নাদিয়া নাদিমের বাবা ছিলেন একজন ফুটবল-পাগল মানুষ। তবে ছিলেন হকি খেলোয়াড়। সেই খেলোয়াড়ের ঘরে তো খেলোয়াড়েরই জন্ম হবে।
শুরুটা ছিল চ্যালেঞ্জের
যদিও প্রথম দিকে একটি ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা মেয়ের পক্ষে ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়টি সহজ ছিল না।
পারফরম্যান্সের আগে নাদিয়া সবার দৃষ্টি কাড়েন রঙধনু কালারের ব্যান্ড মাথায় পরে খেলার কারণে। পরবর্তীকালে স্ট্রাইকার হিসেবে মাঠ মাতিয়েছেন।
সংগ্রামী নারীর রোল মডেল নাদিয়া নাদিম
নাদিয়া নাদিম এখন একজন সংগ্রামী নারীর রোল মডেল। জীবনে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কীভাবে সাফল্যের শিখরে যেতে হয়, সেটা দেখিয়েছেন নাদিয়া নাদিম। ইউরোপসহ বিশ্বের তরুণ নারীদের স্বপ্নের রানীতে পরিণত হয়েছেন এই আফগান নারী।
৩৩ বছরের নাদিয়ার মধ্যে এখনও ভালো খেলার ক্ষুধা, গোল করারও। এখনই তিনি থামতে চান না। এগিয়ে যেতে চান তরতর করে। কারণ, ফুটবলকে বিদায় জানানোর এখনও কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই। আর খেলে যেতে চান, অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
শিশুদের স্বপ্নের কারিগর নাদিয়া নাদিম
শরণার্থী শিবিরে থাকা শিশুদের স্বপ্নের কারিগরও তিনি। ফুটবল মাঠ থেকে অবসরের পর সার্জন হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশুদের কল্যাণে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান এই সুপার উইম্যান।
ক্লাবইউ নামের একটি এনজিও ও পিএসজিকে সঙ্গে নিয়ে নাদিয়া চেষ্টা করছেন শরণার্থী শিবিরের শিশুদের জন্য স্পোর্টস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে। তার প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শিবিরে।
অবসরের পর যা করতে চান নাদিয়া
ফুটবল মাঠের বাইরে নাদিয়া পড়াশোনা করছেন রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জন হতে। ফুটবল মাঠ থেকে অবসরের পর সার্জন হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশুদের কল্যাণে নিজেকে পুরোদমে ব্যস্ত রাখতে চান এই সুপার উইম্যান।
পণ্যদূত নাদিয়া নাদিম
নাদিয়া নাদিমকে কেবলই একজন ফুটবলার ভাবলে ভুল হবে। প্রথম ড্যানিশ নারী ফুটবলার হিসেবে তিনি ২০১৭ সালে পণ্যদূত হয়েছেন নাইকির।
এছাড়াও পণ্যদূত হয়েছেন জর্ডান, ভিসা ও হুগো বসের। তিনি শিখছেন নিত্যনতুন ভাষা। এত সব কাজ করার পর ডাক্তারি পড়তে রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারিতে ট্রেনিং নেওয়ার সময় বের করেছেন।
নাদিয়া নাদিমের আত্মজীবনী মাই স্টোরি
২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনী ‘মাই স্টোরি’। বইটি মনোনীত হয় বর্ষসেরা স্পোর্টস বুক হিসেবে।
ফুটবল ক্যারিয়ারে নাদিয়া নাদিম কখনো জিতেছেন, কখনো বা হেরেছেন। কিন্তু মানুষে মানুষে ভেদাভেদ-হানাহানির এ সময়টায় খুশি ফেরি করার যে সাহস দেখিয়েছেন নাদিয়া, তাতে বিজয়ীর মুকুটটা তাঁর গলায় পরিয়ে দিতে হচ্ছে ধ্রুবভাবেই।
নাদিয়া নাদিমের সাক্ষাতকার
শৈশবের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় নাদিয়াকে। তিনি বলেন, আমাদের একমাত্র চিন্তা ছিল কীভাবে বেঁচে থাকা যায়। পরের দিন পর্যন্ত কীভাবে টিকে থাকা যায়। সবসময় ভাবতাম আমি কী করব এখন? কী করলে কালকের সকালটা দেখতে পাব?
আমার কাছে দেখেই (ফুটবল) ভালো লেগেছিল। শুরুতে সবাই বলে লাথি মারতাম। বলের পেছনে সবাই মিলে ছোটাছুটি করতাম। একবার খেলা শুরুর পর থেকে আমি কখনোই খেলা ছাড়িনি। সেখান থেকে শুরু করে আমি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে খেলেছি।
যে যেভাবে পারছে বলে লাথি মারছে, সবাই সবার পেছনে দৌড়াচ্ছে, যেন সবাই সবার প্রতিপক্ষ। প্রথম দেখাতেই আমার মনে হয়েছিল, আরে, দারুণ তো! আমাকেও এটা খেলতে হবে। সেদিন থেকে ফুটবলটাই আমার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে গেল। আর দেখুন না, ফুটবলটা আজ আমাকে কোথায় তুলে এনেছে! প্যারিস সেন্ট জার্মেই।
রিফিউজি ক্যাম্পে যে না থেকেছে, সে কখনো ওখানকার ভয়াবহতা বুঝতে পারবে না। আমার মনে হয়, ওই রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে যারা থাকে, তাদের সবারই অভিজ্ঞতা মোটামুটি এমন। ওখানে প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নামতে হয় আপনাকে। কেবল একটি আশাকে সঙ্গী করে বেঁচে থাকেন আপনি, কাল সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
অন্যতম থেকে অনন্যা নাদিয়া
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শরণার্থী শিবিরগুলোতে স্পোর্টস ক্লাব গড়ে তুলছেন নাদিয়া নাদিম । প্রাথমিক লক্ষ্যটাও নির্ধারণ করে ফেলেছেন তারা, অন্তত ১০ হাজার শরণার্থী শিশুর কাছে খেলাধুলার সুতো বেয়ে পৌঁছে যাওয়া।
নাদিয়া নাদিম বলেন, কৌতূহলটা মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের জন্মগত। নতুন কিছু দেখলেই তারা নিজেরা সেটা অনুকরণের চেষ্টা করে। তাই, শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠা শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এই সুযোগটা করে দিতেই কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে একটি ‘ক্লাব সেন্টার’ গড়ে তুলবে পিএসজি আর ক্লাবু। নাদিয়ার সঙ্গে জুটি গড়ে তাদের প্রথম প্রকল্প হতে যাচ্ছে এটাই। ক্লাব সেন্টারে খেলাধুলার যাবতীয় সরঞ্জামাদি তো মিলবেই, শিশুদের জন্য আয়োজন করা হবে ট্রেনিং সেশন থেকে শুরু করে টুর্নামেন্টও।
‘আমি জানি না সেখানে আসলে কী অবস্থা! তবে ভেবে দেখুন, কক্সবাজারে (বিশ্বের সর্ববৃহৎ রিফিউজি ক্যাম্প) যে লক্ষাধিক শরণার্থী আছে, এই প্রকল্প শুরু করার কারণে সেখান থেকে দুজন, তিনজন, চারজন বা আরও বেশ কিছু ফুটবলার উঠেও আসতে পারেন।’
‘খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে ওরা। খেলাধুলার মাধ্যমে আমরা সেখানে আশার আলো পৌঁছে দিতে চাইছি। বাস্তবতা থেকে দুয়েক ঘণ্টার জন্য যদি আমরা ওদেরকে বের করে আনতে পারি, একটা ভবিষ্যৎ স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে পারি, দুর্দান্ত একটা ব্যাপার হবে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ওই সময়টা শারীরিকভাবেই যথেষ্ট কঠিন, কিন্তু মানসিকভাবে…. রীতিমতো দুর্বিষহ।’
তথ্যসূত্র
- ফিফা ডটকম
- সিএনএন
- দ্য ওয়াল
- ফোর্বস ম্যাগাজিন
- ডেইলি মেইল
- উইকিপিডিয়া