পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন সিএবিতে পরপর দুটি অনুষ্ঠান হলো বুধবার ও বৃহস্পতিবার৷ কোনওটাতেই বক্তৃতা দিতেই পারেননি তিনি৷ আবেগে ইদানীং এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়ছেন৷ নিজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পর্যন্ত কোনও ভাষণ দেননি৷ যা প্রায় বিরল৷
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে অনেক দিন হয়ে গেলেও সরকারি সংবাদ সম্মেলন করতে পারেননি৷ একদিন সিএবিতে এসেছিলেন মাঝে৷ সেখানে ভিড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে বাড়ি চলে যান৷ বিশ্বকাপে খেলা দেখতে যাব বলেও যেতে পাননি৷
৭৫ বছরের জগমোহন ডালমিয়া এই অবস্থায় ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কী ভাবে কাজ চালাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷ শ্রীনিবাসন তাঁকে যে কারণে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করেছেন, তার একটা কারণ ডালমিয়া তাঁর কথাতেই কাজ করবেন৷ কিন্ত্ত সমস্যা হচ্ছে, যতটা ভাবা হয়েছিল, ততটা সুস্থ নন ডালমিয়া৷ তাঁর অঙ্গুলীহেলনে কাজ করতেও নারাজ৷ কাজেই বোর্ডের কাজকর্ম শিকেয়৷ কী ভাবে কাজ হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্ত বোর্ডের কর্তারাই৷ এরই মধ্যে রমরমা শুরু হয়ে গিয়েছে নয়া সচিব বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরের৷
বিশ্বকাপে হেরে ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড৷ ডালমিয়া কোনও বিবৃতি দেননি৷ শ্রীনিকে নিয়ে বাংলাদেশ বোর্ড কর্তার এমন আক্রমণ, তাতেও নীরব ডালমিয়া৷ এমন শরীর নিয়ে ডালমিয়া কী ভাবে কার মাধ্যমে কাজ করবেন? এর চেয়ে বছর দেড়েক আগে অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়ে অনেক সক্রিয় ছিলেন৷ দশ দফা শুদ্ধিকরণের বিধান দিয়েছিলেন৷ এ বার পুরো দায়িত্ব পেয়ে এখনও নীরব ডালমিয়া৷
এটা সত্যি, প্রেসিডেন্টকে প্রতিদিন রুটিন কাজ করতে হয় না৷ কিন্ত্ত নির্দেশ দিয়ে তো কিছু করাতে হয়৷ সেই ব্যাপারটাও ডালমিয়ার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না৷ প্রথমে যখন শ্রীনি ডালমিয়াকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছেন, তখন ভাবা হয়েছিল, সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে তাঁর কাজ হাল্কা করে দেবেন৷ এখনও ডালমিয়া ও শ্রীনির মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেন বিশ্বরূপ৷ কিন্ত্ত প্রশ্ন হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের নিজস্ব নির্দেশ না এলে বিশ্বরূপ কী করবেন?
সিএবিতে অনেকেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন, এই প্রেক্ষাপটে দিশাহারা বোর্ড৷ এখন ডালমিয়াকে অনেকটা ভরসা করতে হবে বিশ্বরূপ ও সৌরভ গাঙ্গুলির ওপর৷ সৌরভের তুলনায় বিশ্বরূপই বেশি ঘনিষ্ঠ শ্রীনির৷ ডালমিয়াকে কিছু পরামর্শ দিতে গেলেও বিশ্বরূপকে এখন দরকার শ্রীনির৷
সব মিলিয়ে শ্রীনি-উত্তর বোর্ডে অভূতপুর্ব পরিস্থিতি৷ কর্তারা ভাবতে পারেননি, এককালের দাপুটে ডালমিয়া প্রেসিডেন্ট হলে এমন পরিস্থিতি হবে৷ শ্রীনি শিবির ও শ্রীনি বিরোধী শিবির, দু’পক্ষই বুঝতে পারছে না, ডালমিয়াকে নির্বাচন করাটা ভালো হল, না, খারাপ৷
বোর্ড মহলে খোঁজ করে দেখা যাচ্ছে নতুন প্রেসিডেন্টের হাত ধরে এই এক মাসে নতুন কিছুই হয়নি৷ সাধারণত বার্ষিক সাধারণ সভার ৩ সপ্তাহের মধ্যে কার্যকরী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল৷ এখন কবে হবে? কেউ জানেন না৷ জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী কমিটির বৈঠক তিন দিনের নোটিশে করা যায়৷ কিন্ত্ত শুক্রবার পর্যন্ত কোনও ক্রিকেট সংস্থায় কোনও নোটিশ নেই৷
কেন জরুরি কার্যকরী কমিটি ডাকতে হবে, এ প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ৷ এজিএমের পর দিব্যি তো সময় পাওয়া গিয়েছিল৷ তখন বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ চলছে বলে এখন কিছু হচ্ছে না৷’ ভারতের সেই বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়ে গিয়েছে, তা-ও ১০ দিন হয়ে গেল৷ তা ছাড়া ধোনিদের বিশ্বকাপ খেলার সঙ্গে বোর্ডের নতুন কমিটি হওয়ার কী সম্পর্ক, সেটাও বুঝে উঠতে পারছে না বোর্ডের একাংশ৷ বিশ্বকাপের মধ্যে আইসিসি পর্যন্ত বৈঠক করেছে, তা হলে বোর্ডের বাধা কোথায়?
আইপিএল শুরুর চার দিন আগেও আইপিএল গর্ভনিং কাউন্সিল নামে যে কমিটি হওয়ার কথা, সেটাও করে উঠতে পারেননি ডালমিয়ার বোর্ড৷ নতুন কমিটিতে নতুন চেয়ারম্যান কে হবেন, সেটাই এখনও চূড়ান্ত নয়৷ এখনকার চেয়ারম্যান রঞ্জিব বিশওয়ালের সঙ্গে এখানে লড়াই অজয় শির্কের৷ শরদ পাওয়ার লবির হয়ে সচিব অনুরাগ ঠাকুর চাইছেন বোর্ডের প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ শির্কেকে৷
প্রশ্ন হল, আইপিএলের কর্মকাণ্ড এখন তা হলে কে দেখছে৷ বোর্ডের অন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, বিতর্কিত সুন্দর রামনই আইপিএলের সর্বেসর্বা৷ যাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টেও৷ সেই সুন্দর রামনই বহাল তবিয়তে চালাচ্ছেন আইপিএল৷
এ সবের মধ্যে মঙ্গলবার কলকাতায় অনিল কুম্বলেদের নিয়ে বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক ডেকেছেন অনুরাগই৷ এর আগে বিভিন্ন রাজ্য টিমের অধিনায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন৷ বিশ্বকাপে ভারতের ম্যাচও দেখতে গিয়েছিলেন৷ ভারতীয় ক্রিকেট নতুন কোচ খুঁজছে বলে, মিডিয়ায় বিবৃতিও দিয়েছিলেন৷ যা নিয়ে বোর্ড মহলে উষ্মা থাকলেও তাঁকে ডালমিয়া কিছু বলেননি৷
সোজা কথায়, বোর্ডে এখন চরম ডামাডোল৷