দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর ক্রিকেটে ফিরলেও ধার কমেনি পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমেরের। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে তিনি প্রায় হ্যাটট্রিই করে ফেলেছিলেন। তবে হ্যাটট্রিক না পেলেও ১৬ ওভার বোলিং করে ৭৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট লাভ করে নিজের জাত ঠিকই চিনিয়েছেন এই বাঁ-হাতি পেসার।
শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের দ্বিতীয় সারির দল ওমর অ্যাসোসিয়েটস’র হয়ে মোহাম্মদ আমের খেলতে নামেন। নিজের ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারে পর পর দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছেন ২২ বছর বয়সী এই পাক পেসার। তবে পরের বলটি মোহাম্মদ ইরফান কোনো রকম রক্ষণাত্মক খেলে আমেরকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করেন।
নিজের প্রথম স্পেলে ৬ ওভার বল করে ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট লাভ করেন আমের। বাকি দুই স্পেলে উইকেটে দেখা পাননি তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে আরও ব্যয়বহুল ছিলেন ২২ বছর বয়সী এই পেসার। মাত্র ৩ ওভারে ৩১ রান দেন তিনি। সর্বশেষ ১৬ ওভার শেষে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৭৩ রানে ৩।
শুক্রবার তিন দিনের ম্যাচের প্রথম দিন শেষে মোহাম্মদ আমের বলেন, ‘আজ শুরু থেকে আমি ব্যাটসম্যানদের যথাসম্ভব শট খেলার জন্য বাধ্য করেছি। খেলায় নিজের শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করেছি। তবে সত্যি বলতে, এমন দীর্ঘ সময় পর ব্যাপারটা আমার জন্য সহজ ছিল না। মনে হচ্ছে যেনো শূণ্য থেকে শুরু করছি।’
সর্বকনিষ্ট বোলার হিসেবে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভ করা আমিরের ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল অসাধারণ। অথচ লোভের বশে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে নিজের প্রতিভার প্রতিই অবিচার করেছেন তিনি। অতীতের দিকে তাকালে এখনও আফসোস হয় তার।
আমের বলেন, ‘সাড়ে চার বছর পূর্বে আমি সাফল্যের চূড়ায় ছিলাম। সেই সময়গুলো আর ফিরে পাবো না। তবে একজন মুসলিম হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, সেই ঘটনা আমার জীবনে দারুণ শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে। হারিয়ে যাওয়া সময়গুলো আমি ফিরিয়ে আনতে পারবো না; কিন্তু আগামী সময়গুলো তো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবো!’
ঘরোয়া লিগের দ্বিতীয় সারির এই দলটির হয়ে আরও দুটি তিনদিনের ম্যাচ খেলবেন আমের। এরপর আগামী মাসে পাকিস্তানের ঘরোয়া লিগের টি২০ টুর্নামেন্টে খেলবেন তিনি। এসব ম্যাচগুলোতে ভালো পারফর্ম করে পাকিস্তান জাতীয় দলে ফিরতে চান প্রতিভাবান এই পেসার। সামনে ভারতের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে সিরিজও খেলতে চান তিনি।
আমির বলেন, ‘সব সময়ই লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের হয়ে খেলা এবং সেটির জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। হ্যাঁ, সামনে ভারত সিরিজ। যেটিতে খেলার প্রবল ইচ্ছে রয়েছে আমার। কী ঘটবে জানি না। তবে আমি ঘরোয়া লিগে আপাতত পারফর্ম করে যেতে চাই এবং শারীরিকভাবে ফিট থাকতে চাই। বাকিটুকু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ও নির্বাচকদের ওপরি নির্ভর করবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে লর্ডস কেলেংকারির জের ধরে সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমিরকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ৫ বছরের জন্য ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়। তবে গত বছর শেষ দিকে এসে আইসিসি দুর্নীতি দমন আইনে পরিবর্তন এনে নিষিদ্ধ ক্রিকেটারদের শাস্তি শেষ হওয়ার আগে ঘরোয়া ক্রিকেট লীগে খেলার সুযোগ করে দেয়। সে হিসেবেই শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরতে পারলেন আমের। আইসিসি কর্তৃক আরোপিত ৫ বছরের ‘নিষেধাজ্ঞা’ শাস্তির মেয়াদ শেষ চলতি বছরের আগস্টে। একই সঙ্গে শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফেরও।’
মেহেদী হাসান