ভারত সিরিজের জন্য ২৩ জনের প্রাথমিক দলেও আল-আমিন হোসেনের না থাকার কারণ বলতে আগ্রহী নন নাঈমুর রহমান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান নির্বাচকদের কোর্টেই বল ঠেলে দিয়ে বলছিলেন, ‘আল-আমিন কেন দলে নেই, নির্বাচকরাই এ প্রশ্নের উত্তর ভালো দিতে পারবেন। আমি তো আর নির্বাচক নই।’
আসলেই একজন ক্রিকেটারের দলে থাকা বা না থাকার ব্যাখ্যা নাঈমুরের দেওয়ার কথা নয়। সে জন্য নির্বাচকরাই আছেন। তবু আল-আমিন বিষয়ে নাঈমুরের প্রশ্নের মুখে পড়ার কারণ অবশ্যই আছে। আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের (আকসু) রাডারে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় ধরা পড়ে বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরে আসার দণ্ড পাওয়া পেসারের এবার প্রাথমিক দলেই না থাকার পেছনে সেটিরও প্রভাব আছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল ক্রিকেটাঙ্গনে। এমন একটা প্রচার ছিল যে আরো তদন্তের স্বার্থে আকসু আপাতত আল-আমিনকে কোনো পর্যায়ের দলেই না রাখার অনুরোধ করেছে বিসিবিকে। যদিও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ তেমন খবরের সত্যতা নেই বলেই নিশ্চিত করেছেন, ‘আকসুর তরফ থেকে আল-আমিনের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।’
আল-আমিন নিজেও আশ্বস্ত যে বিশ্বকাপের সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের রেশ তাঁকে আর টানতে হবে না, ‘ম্যানেজার (খালেদ মাহমুদ) আমাকে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার ঘটনা নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে আর কোনো সমস্যা নেই। তিনি আমাকে মন দিয়ে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন আমি সেই চেষ্টাই করছি।’ যদিও একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আকসু কিংবা বিসিবির পক্ষ থেকে না হলেও আল-আমিনকে দলে নেওয়ার বিষয়ে অলিখিত এক নিষেধাজ্ঞা ঠিকই জারি আছে। যেটি কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, আরোপ করেছেন একজন ব্যক্তি। প্রধান নির্বাচক ফারুক যদিও দিন দিন এ পেসারের পারফরমেন্সের মান খারাপের দিকে যাওয়ার কথাই আনুষ্ঠানিকভাবে বলে আসছেন। তবে যে কথাটি তিনি প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না, সেটি হলো আল-আমিন বিষয়ে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের আপত্তি।
পাকিস্তান সিরিজ শেষে ছুটি কাটাতে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে এ শ্রীলঙ্কানই নির্বাচকদের অনুরোধ করে গেছেন যাতে আল-আমিনকে দলে রাখা না হয়। একজন পেসারকে ঘিরে তাঁর এমন অবস্থান নিয়ে ফেলার পেছনে অস্ট্রেলিয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনাই কারণ বলে নিশ্চিত করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র। গভীর রাতে টিম হোটেল থেকে বেরিয়ে কোথাও যাওয়া এবং সেই ঘটনায় আকসুর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ায় বিশ্বকাপের সময় থেকেই আল-আমিনকে ঘিরে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়ে আছে। এমন একজন ক্রিকেটারকে কোনো পর্যায়েই আপাতত দলের সঙ্গে রাখা ঠিক হবে না বলেও নাকি মন্তব্য করে গেছেন হাতুরাসিংহে। কোচ যেহেতু আল-আমিন দলে থাকলে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন না, তাই নির্বাচকরাও আর তাঁকে ২৩ জনের প্রাথমিক তালিকায় রাখতে পারেননি। প্রধান নির্বাচক অবশ্য তাঁর সঙ্গে হেড কোচের আল-আমিন বিষয়ক কথোপকথনের ব্যাপারটি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। বরং ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না’ বলে সযতনে বিতর্ক এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন ফারুক।
পারফরমেন্সের অবনতিই আল-আমিনের দলে না থাকার আসল কারণ বলে বারবার উল্লেখ করতে চাইলেন প্রধান নির্বাচক। এটি অবশ্য নতুন নয়, পাকিস্তান সিরিজের আগে থেকেই নির্বাচকরা তাই বলে আসছেন। ফারুক কালও বললেন, ‘আসলে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর থেকেই ও আর ঠিক আগের সেই আল-আমিন নেই। অথচ এর আগে একটি বছর ও সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে। কিন্তু অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই ধার কমে গেছে।’ সন্দেহজনক অ্যাকশনের জন্য অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর আল-আমিন গত নভেম্বরে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটো ওয়ানডে খেলেছেন। খেলেছেন তিন ম্যাচ সিরিজের একটি টেস্টও। ছিলেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও। তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ অ্যাকশনের প্রভাব পারফরমেন্সে পড়ার কথা এত দিন পর বলা কেন? জবাবে ফারুক বললেন, ‘তখনো (জিম্বাবুয়ে সিরিজ ও বিশ্বকাপ) পারফরমেন্স খারাপের দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আরো খারাপ হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব ভালো কিছু করার ঘটনা নেই। তা ছাড়া এই সময়ের মধ্যে অন্য ছেলেগুলো ওর চেয়ে অনেক ভালো করছে। যেমন তাসকিন ও মুস্তাফিজের মতো তরুণরা। এ কারণেই বিবেচনায় আসেনি আল-আমিন।’ নিজের পারফরমেন্স নিয়ে একই মূল্যায়ন আল-আমিনেরও, ‘আমারও মনে হয়, পারফরমেন্স আগের মতো হচ্ছে না। বিসিএলে (বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) দুটি ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছি মোটে চারটি।’ পারফরমেন্স তাঁর দলে না থাকার একটি কারণ বটেই। তবে হাতুরাসিংহের ‘নিষেধাজ্ঞা’ও তাঁর পৃথিবী আরো কঠিন করে দিয়েছে নিঃসন্দেহে।