বরিস জনসনের গোপন বিয়ে

বরিস জনসনের গোপন বিয়ে : কে এই ক্যারি সিমন্ডস

ব্রিটেনে দুইশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিয়ে করলেন। তারপরও এই বিয়ে হয়েছে ওয়েস্টমিনিস্টার ক্যাথেড্রালের এক গোপন অনুষ্ঠানে। ডাউনিং স্ট্রিটের সিনিয়র কর্মকর্তারাও এই বিয়ের ব্যাপারে অবগত ছিলেন না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নবপরিণীতা স্ত্রী ক্যারি সিমন্ডস এর বিয়ে পড়িয়েছিলেন ফাদার ড্যানিয়েল হামফ্রেস। বরিস জনসন হচ্ছেন ১৭২১ সালের পর ব্রিটেনে তালাকপ্রাপ্ত তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। আর সিমন্ডস হচ্ছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর ১৭৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী সঙ্গিনী। সিমন্ডসের চেয়ে জনসন ২৪ বছরের বড়।

এখনতো সরকারি নানা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হবেন সিমন্ডস। নীতি বা রাজনৈতিক ভূমিকা নেবেন। দপ্তরের কাজেও সহায়তা করবেন। বিদেশের বড় সফরগুলোয় সঙ্গ দিবেন।

বরিস জনসন-মিস সিমন্ডস সম্পর্ক

৫৬ বছর বয়স্ক বরিস জনসনের সাথে ৩৩ বছরের মিস সিমন্ডসের প্রেমের খবর গণমাধ্যমে প্রথম আসে ২০১৯ সালে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বরিস ও ক্যারি বাগদানের খবর প্রকাশ করেন এবং ঘোষণা দেন যে তারা বিয়ে করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। তাদের সন্তান আসছে। লন্ডনের একটি হাসপাতালে তাদের ছেলেসন্তান উইলফ্রেড লরি নিকোলাসের জন্ম হয় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় বরিস জনসনকে যে দুই চিকিৎসক দেখভাল করতেন, তাদের নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন বরিস-সিমন্ডস দম্পতি। জনসন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের দায়িত্ব নেয়ার পর বরিস জনসন এবং তার বান্ধবী ক্যারি সিমন্ডস যুগল হলো ডাউনিং স্ট্রিটের প্রথম অবিবাহিত যুগল। এই যুগলের ডিলান নামের একটি কুকুর ছানা রয়েছে; দক্ষিণ ওয়েলসের একটি পশু উদ্ধার দাতব্য সংস্থা থেকে তারা কুকুর ছানাটি নিয়েছেন।

কে এই ক্যারি সিমন্ডস?

কে এই ক্যারি সিমন্ডস- এ নিয়ে রয়েছে অনেকেরই কৌতুহল। সিমন্ডস হচ্ছেন ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথু সিমন্ডস এবং সংবাদপত্র আইনজীবী জোসেফিন ম্যাকাফি’র কন্যা। সিমন্ডস লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বড় হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস এবং থিয়েটার নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। রিচমন্ড পার্ক ও নর্থ কিংস্টনের এমপি জ্যাক গোল্ডস্মিথের জন্য কাজ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তার প্রথম চাকরী হয়।

সিমন্ডস লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বড় হয়েছেন
সিমন্ডস লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বড় হয়েছেন

২০১০ সালে কনজারভেটিভ পার্টিতে প্রেস অফিসার হিসাবে যোগ দেন। দুই বছর পরে বরিস জনসনের নির্বাচনী প্রচার শিবিরে কাজ করেন, যে নির্বাচনে লন্ডনের মেয়র হিসাবে জনসন পুনর্নিবাচিত হন। এর পরে তিনি কাজ করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জন হোয়াইটিংডেলের জন্য।

তারপর ডিপার্টমেন্ট ফর কম্যুনিটিস এন্ড লোকাল গভর্নমেন্টের তৎকালীন প্রধান সাজিদ জাভিদের দপ্তরে মিডিয়া স্পেশাল অ্যাডভাইজর হিসাবে দায়িত্ব নেন। তিনি দলের যোগাযোগ বিষয়ক প্রধান হয়ে ওঠেন। কিন্তু ২০১৮ সালে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সমুদ্রের জৈববৈচিত্র রক্ষায় কাজ করা প্রতিষ্ঠান ওসেনার জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ শুরু করেন।

২০১৯ সালে জনসনের নেতৃত্ব নেয়ার প্রচারণার সময় ১২ জুনেও সিমন্ডসকে দর্শক সারিতে বসে থাকতে দেখা যায়। জুলাই মাসে যখন জনসন প্রথমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হন, জনসনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশের সময় সাইড লাইনে থেকে দেখেছেন সিমন্ডস, কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর এই যুগল একত্রেই ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করেন।

সংরক্ষণ বিষয়ে মিজ সিমন্ডের আগ্রহ রয়েছে। পশুপাখির ওপর নির্মমতা ও প্লাস্টিক বর্জ্য বিষয়ক খবর তিনি প্রায়ই তার টুইটার একাউন্টে শেয়ার করে থাকেন। তিনি একবার বলেছিলেন, একটি পশু রক্ষা দাতব্য সংস্থায় শিক্ষানবীশ হিসাবে কাজ করার ফলে জীব-জন্তুর অধিকার রক্ষার বিষয়টি তার ভেতরে কাজ করতে শুরু করে। জনসনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেয়া প্রথম বক্তৃতায় জীব-জন্তুর কল্যাণের বিষয়টি থাকার পেছনে সিমন্ডের অবদান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় একবার সিমন্ডসকে ব্ল্যাক ক্যাব ধর্ষণকারী জন ওরবয়েজ গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়েছিল। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে যখন তিনি পশ্চিম লন্ডনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন জন ওরবয়েজ তার সামনে ক্যাব থামিয়ে পাঁচ পাউন্ডের বিনিময়ে বাসায় পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি তাকে এক গ্লাস শ্যাম্পেন খাওয়ার প্রস্তাব করেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তবে তিনি এক শট ভদকা খেয়েছিলেন।

জনসনের আগের ২ বিয়ে

জনসনের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ছোটবেলার বন্ধু ম্যারিনা হোয়েলার। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ২৫ বছরের বিবাহিত সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে তারা আলাদা হন। ম্যারিনা-জনসনের সংসারে দুই কন্যা ও দুই পুত্র রয়েছে।

হোয়েলারের আগে জনসন অ্যালেগ্রা মস্টিন-ওয়েনকে ১৯৮৭ সালে বিয়ে করেছিলেন। সেই বিয়ে টিকেছিল ছয় বছর। সে হিসাবে ক্যারি হলেন বরিসের তৃতীয় স্ত্রী। বরিস জনসনের এটি তৃতীয় বিয়ে হলেও ক্যারি সিমন্ডসের জন্য এটিই প্রথম বিয়ে। ২০০৯ সালে লন্ডনের মেয়র থাকাকালীন একটি সম্পর্কের মাধ্যমে জনসন একটি কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছিলেন।

Scroll to Top