ফাতাহকে সুবিধা দিয়ে হামাসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের

আনিসুর রহমান এরশাদ

১১দিনের হামলা শেষে যুদ্ধবিরতি চলছে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের পেছনে কি মার্কিন সমর্থন রয়েছে? রয়েছে অস্ত্র ও মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহযোগিতা? নানা অভিযোগ উঠে আসছে মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে সফরে এলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। পররাষ্ট্রনীতির খুঁটিনাটি দিক সম্পর্কে খুবই অভিজ্ঞ ও ঝানু এই কূটনীতিক জো বাইডেন টিমের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। সুচিন্তিত মানুষ। তুলনামূলক মৃদুভাষী। তাকে ‘কূটনীতিকদের কূটনীতিক’ বলা হয়।

বারাক ওবামার আমলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে দ্বিতীয় শীর্ষ কর্তাব্যক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। যেই প্রশাসনে বাইডেন ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট সেই প্রশাসনে তিনি ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ছিলেন, উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও ছিলেন। বিল ক্লিনটনের হোয়াইট হাউসে ‘স্পিচ রাইটার’ছিলেন। পরে তিনি বিল ক্লিনটনের অন্যতম জাতীয় নিরাপত্তা সহযোগী হন। নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে বাইডেনের দীর্ঘদিনের অগাধ আস্থাভাজন এই ব্যক্তি বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার পক্ষে। তা না হলে চীনের মতো প্রতিপক্ষ দেশ এই ভূমিকা নিয়ে নেবে বলে মনে করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যে সফরের উদ্দেশ্য

কূটনৈতিক সমর্থন ও ইসরাইলের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনে আর্থিক সাহায্য আদায়ের লক্ষ্যে অ্যান্টনি ব্লিংকেনের এ সফর। ইসরাইল, ফিলিস্তিন, মিশর ও জর্ডানের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা। তবে ব্লিংকেন খোলাসা করেছেন যে শান্তি আলোচনা নয়, বরঞ্চ তার এই সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির দীর্ঘমেয়াদ নিশ্চিত করা। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মিসরের মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে তা আরও জোরদার ও কার্যকর করতেই বাইডেনের নিদের্শে তার এই মধ্যপ্রাচ্য সফর।

বাইডেন প্রশাসন মনে করছে যে স্থবির হয়ে পড়া শান্তি আলোচনা শুরু করতে স্থিতিশীলতা জরুরি এবং তা নিশ্চিত করতে ব্লিংকেন জেরুসালেম, রামাল্লাহ এবং কায়রোতে প্রকাশ্যে ও গোপনে তার পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন পক্ষের জন্য শর্তগুলো তুলে ধরেছেন। যুদ্ধবিরতিকে টেকসই করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের উদ্দেশ্য বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে ইসরাইলকে পরিপূর্ণ সমর্থন দেয়া এবং ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করাই মূল উদ্দেশ্য। ওয়াশিংটন ইসরাইলকে আরও অস্ত্রে সজ্জিত করা এবং গাজা যুদ্ধে পরাজিত ইসরাইলের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য মাঠে নেমে পড়েছে।

ইসরাইল সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গুরুত্বারোপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা এটা নিশ্চিত হতে চাই ইসরাইল যেন আত্মরক্ষা করতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিংকেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় ওয়াশিংটনের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন। ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে তা আবারও ইসরাইলকে পুষিয়ে দেয়া হবে।

নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ

মধ্যপ্রাচ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন প্রথমে ইসরাইলে পা রাখেন। তেল আবিবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জেরুসালেমে মঙ্গলবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিংকেন ফিলিস্তিনিদের ‘নিরাপত্তা‘ এবং ‘সমান মর্যাদা‘ পাওয়ার অধিকারের কথা বলেছেন।

ব্লিংকেন বলেন, তিনি বলেন, ‘হতাহত প্রায়ই কেবল সংখ্যায় নেমে আসে। কিন্তু প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে এক জন মানুষ-একজন মেয়ে, একজন ছেলে, একজন বাবা, একজন মা, বা একজন বন্ধু। তালমুদেনর শিক্ষা অনুসারে একটা প্রাণ হারানো মানে একটা দুনিয়া হারানো, তা সেই প্রাণ ইসরাইলি কিংবা ফিলিস্তিনি যারই হোক। ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বদ্ধপরিকর ও অঙ্গীকারবদ্ধ। ইসরাইলি জনসাধারণের বিরুদ্ধে হামাসের হাজার হাজার অবিরাম রকেট হামলার মোকাবেলায় ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইসরায়েলি জনসাধারণের বিরুদ্ধে হামাসের হাজার হাজার অবিরাম রকেট হামলার মোকাবেলায় ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

ব্লিংকেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু খোলাখুলি বলেছেন, হামাসের কাছ থেকে কোনো হামলা-উসকানি আসলে তার ‘কড়া জবাব’ দেওয়া হবে। অর্থাৎ হামাস আবার সীমান্তের এপারে রকেট ছুড়লে খুবই শক্তিশালী পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে না ফেরার পরামর্শ দিয়েছে।

ফিলিস্তিনে পুনরায় মার্কিন দূতাবাস চালুর ঘোষণা

অধিকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠককালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস পুনরায় চালু করা হবে। সেই সঙ্গে  ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) অফিস খুলে দেওয়া হবে।

অধিকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠককালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস পুনরায় চালু করা হবে।

ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সহায়তা করার জন্য এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে এবং এ বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করতে আমি ফিলিস্তিন এসেছি। পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর নির্মিত একটি সম্পর্ক এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিরা একইভাবে সুরক্ষা, স্বাধীনতা, সুযোগ ও সমান মর্যাদা প্রাপ্য।’

দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতিশ্রুতি

মাহমুদ আব্বাসের বৈঠকের পর অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন যে ‘ফিলিস্তিনি আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমেরিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র এখনও দুই-রাষ্ট্র সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্লিংকেন স্পষ্ট করেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চার বছরে যেভাবে ফিলিস্তিনি প্রশাসনকে অব্যাহতভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে, দুর্বল করা হয়েছে, তার পরিবর্তন চায় আমেরিকা। বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের আস্থা অর্জন করতে চায়। বলতে চায় যে আমেরিকা নিরপেক্ষ একটি মধ্যস্থতাকারী, একচোখা নয়’। বাইডেন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

হামাসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা

ব্লিংকেন বলেন, আমি আশ্বস্ত করছি গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছাবে। আমেরিকা গাজার পুনর্গঠনে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনে পয়সা দেবে। তবে তা থেকে হামাস কোনোভাবেই লাভবান হতে পারবে না। গাজায় আমরা পুনর্বাসনের জন্য কাজ করব। সহায়তা তহবিল সঠিকভাবে বিতরণ করা হলে সার্থকভাবেই হাসামকেই দুর্বল করা হবে যারা মানুষের অসহায়ত্ব, দুর্দশা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া, সুযোগের অভাবকে কাজে লাগিয়ে টিকে আছে।

গাজায় হামাসকে পুরাপুরি অবজ্ঞা করে, কোণঠাসা করার সংকল্প বাইডেন সরকার করেছে। ত্রাণের রাস্তা ধরে গাজায় হামাসের শক্তি খর্ব এবং সেখানে মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ ও ফিলিস্তিনি প্রশাসনের প্রভাব বাড়ানোর পথ নিয়েছেন জো বাইডেন। কিন্তু নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জো বাইডেনকে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা বিশ্বাস করে না এবং তাকে ইসরাইলের সমর্থক হিসেবে দেখে।হামাসের ডানা ছাঁটতে ও ইসরাইলকে প্রতিরোধের যে শক্তি অর্জন করেছে তা নষ্ট করতেই  এসব পরিকল্পনা।

গাজায় পুনর্গঠনে সহায়তা বৃদ্ধির ঘোষণা

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গাজায় সহায়তা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হলে আমাদেরকে এই আপাত শান্ত অবস্থাকে অন্যান্য ইস্যু এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কাজে লাগাতে হবে। আর তা শুরু হতে পারে গাজার গুরুতর মানবিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কিংবা গাজা পুনর্গঠন করা দিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্র জরুরি দুর্যোগ ত্রাণ হিসেবে গাজার জন্য ৫৫ লাখ ডলার দেবে এবং তিন কোটি ২০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়া হবে সেখানকার জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি সহায়তা সংস্থাকে। এ ছাড়া ২০২১ সালে ফিলিস্তিনিদের জন্য উন্নয়ন ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে অতিরিক্ত সাড়ে সাত কোটি ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।’

সমঝোতা নিয়ে ইসরাইলের অনীহা

মঙ্গলবার দিনভর বৈঠকগুলো শেষ করে সন্ধ্যায় জেরুসালেমে ফিরে ব্লিংকেন সাংবাদিকদের বলেন, ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কিছুদিন পরপর ‘সহিংসতার এই চক্রের‘পেছনের কারণগুলো দূর করতে চান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ব্লিংকেন সে সময় মন্তব্য করেন, ‘আমেরিকা কী বলছে, কার সঙ্গে বলছে, কী করছে – এর গুরুত্ব অনেক।’

ইসরাইলের ওপর চাপ তৈরির অনুরোধ

মাহমুদ আব্বাস মঙ্গলবারের বৈঠকে ব্লিংকেনকে বলেছেন যে আল আকসা মসজিদ এলাকায় ইসরাইলের নতুন বিধিনিষেধ এবং পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের উদ্যোগ রাজনৈতিকভাবে তার জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে। এগুলো বন্ধ করতে ইসরাইলের ওপর চাপ তৈরি করতে অনুরোধ করেছেন তিনি।

মিসরে দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন

প্রেসিডেন্ট আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক

ইসরাইল সফরের একদিন পর বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন মিসরে পৌঁছান। দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওয়াশিংটন ও কায়রো যুদ্ধবিরতি দৃঢ় করা এবং গাজা উপত্যকায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে তাদের সমন্বয় জোরদার করতে সম্মত হয়।

মিসরের প্রেসিডেন্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সর্বশেষ ঘটনাবলী নিয়ে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রয়োজন। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালিয়ে যেতে চায় তার দেশ।

বৈঠক শেষে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘সংঘর্ষ রুখতে মিসর আমাদের কার্যকরি অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর এখন যুদ্ধবিরতি শক্তিশালী করতে এবং ইতিবাচক কিছু তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করছে।’

দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক

জর্ডান সফরে গিয়ে রাজধানী আম্মানে বুধবার বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনয়নে জর্ডান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন ব্লিংকেন। সেখানে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাত নিরসন নিয়ে পরামর্শ করেন তিনি। যুদ্ধবিরতি অর্জনে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ’র’ কার্যকরী ভূমিকার জন্য তিনি তার প্রশংসা করেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি দেখছি। আমরা যুদ্ধবিরতিকে শেষ হিসেবে নয় বরং সূচনা হিসেবে দেখছি। এর ওপর ভিত্তি করে আমাদের শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তবে শান্তি আলোচনার এখনো অনেক দেরি। শীঘ্র শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে এমন সম্ভাবনা দেখছি না।

এই রক্তাক্ত সংঘাতের অবসানে, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক শক্তি হিসাবে জর্ডনের ভূমিকা প্রদর্শিত হয়েছে এবং সে কারণেই আমাদের সম্পর্ক এতোটা মজবুত ও প্রাণবন্ত। সবচাইতে জরুরি করণীয় কাজ এখন, গাজা’র জনগণের মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসা, বিশেষতঃ পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিস্কাশন নিশ্চিত করা। এসব সমস্যার সমাধান দিতে আমরা সবাই এখন, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

যে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই সফর

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী দল হামাসের সঙ্গে ১১ দিনের সংঘাতের পর ঘোষিত যুদ্ধবিরতি জোরদারের লক্ষ্যে তার এ সফর বলে জানানো হয়েছে। ওই সংঘাতে ৬৬ শিশুসহ অন্তত ২৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি। সংঘাতে ২ শিশুসহ ১২ ইসরাইলি নিহত হয়েছে।

ব্লিংকেনের সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

অধিকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লাহ শহরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাথে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বৈঠকেরও বিরোধিতা করছেন এসব ফিলিস্তিনি। প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।

প্রতিবাদ মিছিলে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের নিন্দা ও সমালোচনা করে ব্যাপক স্লোগান দেয় এবং তারা অসলো চুক্তির বিরোধিতা করে। বিক্ষোভ মিছিলে বহন করা ফেস্টুন প্ল্যাকার্ডের অনেকগুলোতেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ইসরাইলের সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান না দিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কোনো কোনো প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলো, ফিলিস্তিনিদের জীবনের মূল্য আছে।

শেষকথা

ব্লিংকেনের এই সফর আপাতত কিছুদিনের জন্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করতে পারে। তবে এ সমস্যার মূল রয়েছে আরও গভীরে। সেখান থেকে সমাধান করতে হবে।

Exit mobile version