আগামী
এই ম্যাচকে ঘিরে দুই দেশেই আগ্রহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে।
ক্রিকেট দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে এই একটি ম্যাচ থেকেই, আর এবারেও মাত্র কুড়ি মিনিটে শেষ হয়ে গেছে এ ম্যাচের সব টিকিট।
ভারতে টেলিভিশনে এই ম্যাচের সময় মাত্র দশ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনী স্লট বিক্রি হচ্ছে ২৫ লক্ষ রুপিতে।
আর ম্যাচের লাইভ কমেন্ট্রি করতে রাজি হয়েছেন সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন।
দিল্লির মতো কেজো শহরেও চায়ের দোকানের সামনের জটলায় এখন একটাই আলোচনার বিষয় – রবিবারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ।
ছুটির দিনের সকালে আটটা-নটা থেকে লোকে সব কাজ ফেলে কীভাবে টিভির সামনে বসে পড়বে এখন থেকেই তার প্ল্যান ভাঁজা চলছে।
কারণটা সহজ, এটা তো আর স্রেফ নেহাতই একটা ওয়ান-ডে ম্যাচ নয় – এতো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সামিল, সমস্বরে বলে উঠছেন সবাই!
সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার অতুল ওয়াসন বিবিসিকে বলছিলেন, আসলে ভারত-পাকিস্তান খুব একটা ঘন ঘন দেখা হয় না বলেই এই আকর্ষণটা এখনও টিকে আছে।
তাঁর কথা হল, ‘বেশি ঘন ঘন ম্যাচ হলে মশলাটা হারিয়ে যেত। কিন্তু যেহেতু আমরা জানি, ক্রিকেটের বাইরে অন্য নানা কারণে ক্রিকেট মাঠে দুদেশের বেশি দেখা হয় না।
তাই এই ম্যাচটাকে ঘিরে আগ্রহ থাকেই। বিশেষ করে উগ্র দেশপ্রেমী যে জনতা, তারা কিছুতেই এটাকে সাধারণ ক্রিকেট ম্যাচ বলে ভাবতে পারে না!’
আর সে কারণেই এই অসাধারণ ক্রিকেট ম্যাচের বাণিজ্যিক ফায়দা তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাণিজ্যিক দুনিয়াও।
মোহালিতে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বিজ্ঞাপনী দর ছিল দশ সেকেন্ডে কুড়ি লাখ রুপি, এবারে সেটা বেড়েছে অন্তত পঁচিশ শতাংশ।
আরও বড় চমক, ম্যাচের কমেন্ট্রি বক্সে নিয়ে আসা হচ্ছে অমিতাভ বচ্চনকে ।
সারা ভারত যার ব্যারিটোন কণ্ঠস্বরের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ।
ক্রিকেটে উৎসাহ থাকলেও অমিতাভ বচ্চনকে কেউ ক্রিকেট-পণ্ডিত হিসেবে চেনেন না, কিন্তু তাতে কি?
ইতিমধ্যে তাঁর রিহার্সালও শুরু হয়ে গেছে।

বিশ্বকাপে পাঁচবার মুখোমুখি হলেও একবারও পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারেনি
কমেন্ট্রির সঙ্গে নিজের নতুন ছবির প্রোমোশনও করবেন তিনি, আর ভারতের অ্যাড-গুরুরা মনে করছেন তাঁর গলার আওয়াজেই ম্যাচের আকর্ষণ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
এই কথার সঙ্গে একমত ক্রিকেট ভক্তরাও।
ভারত-পাকিস্তান দুদেশেই অনেকে মনে করেন, দল বিশ্বকাপ না-জিততে পারুক কোনও ক্ষতি নেই – কিন্তু এই ম্যাচটা যে কোনওভাবে হোক জিততেই হবে।
সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক আসিফ ইকবালের কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছিল তাঁর কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
আসিফের কাছে বিশ্বকাপ বেশি দামী হলেও বেশির ভাগ পাকিস্তানি যে উল্টোটাই ভাবেন, তা স্বীকার করতে তার দ্বিধা নেই।
সেই সঙ্গেই তিনি বলছেন, যেহেতু বিশ্বকাপে পাঁচবার মুখোমুখি হলেও একবারও পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারেনি তাই এই ম্যাচটা নিয়ে তাদের বাড়তি একটা জেদ থাকেই ।
এবারে হয়তো ফলটা অন্যরকম হবে।
ওই পাঁচটা ম্যাচেই জয়ী ভারত দলে ছিলেন সাচিন তেন্ডুলকর, যিনি এখন অবসর নিয়ে ফেলেছেন।
সাচিনের অনুপস্থিতি ও আরও নানা কারণে রবিবারের ম্যাচ নিয়ে অনেকেই আবার বেশ নিরুৎসাহ দেখা গেল।
দিল্লিতে এক আড্ডায় কেউ বলছেন সাচিন-সহ সেরা তারকারাই আর নেই, কার খেলা দেখব?
তা ছাড়া পড়াশুনো ও নানা কাজে ব্যস্ত তরুণদের অত সময় কই?
কেউ আবার ক্রিকেটেই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছেন।
কেউ বলছেন ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের পর ক্রিকেট দেখতেই আর ভাল লাগে না, মনে হয় সব আগে থেকে ঠিক করা!
তবে এর পরও রবিবার অ্যাডিলেড ওভালে টসের আগে থেকেই ভারত আর পাকিস্তানে যে অঘোষিত বনধ শুরু হয়ে যাবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
আর এই তুমুল আগ্রহকে কোটি কোটি ডলারে বদলে নিতে ক্রিকেট আর বাণিজ্যিক দুনিয়া যে কোনও সুযোগ হাতছাড়া করবে না – তাও বলাই বাহুল্য!
সূত্রঃবিবিসি