রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। এতে শঙ্কায় পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ইউক্রেনীয়। তবে রাশিয়া হামলা চালালে এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বেও। বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব তো অবশ্যম্ভাবী, যা পশ্চিমাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে।
তবে এই শঙ্কা এখনো এড়ানো যেতে পারে। ইউক্রেন সরকার পুরোদস্তুর যুদ্ধের ঝুঁকি কমানোর জন্য চেষ্টা করছে। এ নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা একটি কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে। এদিকে বাইডেন প্রশাসন কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, এই যুদ্ধ খুব শিগগিরই হবে। তবে যুদ্ধ হলে এর রূপ কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ নিয়ে ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, এই সময়ে যেকোনো যুদ্ধই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই ভয়ংকরেরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ হলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আঞ্চলিক সামরিক জোট ন্যাটো। তাদের ওপরই নির্ভর করবে এই যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে ও এর প্রভাব কেমন হবে।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে কমব্যাট সেনা মোতায়েন করবে না ন্যাটো। তবে তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধ হলে সহযোগী দেশ ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে ন্যাটো।
কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে এটি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা চরম আকার ধারণ করতে পারে। বলে রাখা ভালো, ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ যে সম্ভাব্য যুদ্ধে সেনা মোতায়েন না করার কথা আগ বাড়িয়ে বলেছেন, তার কারণটি রয়েছে সংকটের প্রেক্ষাপটের ভেতরেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের দিকেই জোর দিচ্ছেন। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য যে কয়টা শর্ত দিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে ন্যাটো জোটে ইউক্রেনকে যুক্ত না করার বিষয়টি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দেশকে তারা কোনোভাবেই ন্যাটো জোটে দেখতে চায় না। এই শর্ত ‘পরিপালনযোগ্য’ নয় বলে এরই মধ্যে পশ্চিমা পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হলেও স্টলটেনবার্গের ভাষ্য বলে দেয়, তারা বেশ সতর্ক। একই সঙ্গে শেষ কথাটি দিয়ে তারা সম্ভাব্য যুদ্ধে তাদের সংযোগের পথটি খোলাই রেখেছে।
বলা যায় ইউক্রেনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকটের মধ্য দিয়ে গোটা ইউরোপ সরু সুতার ওপর এসে দাঁড়িয়েছে বলা যায়। রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক গবেষক নাইজেল গোল্ড-ডেভিস যেমনটা বলছেন, গত শতকের ৮০-এর দশকের পর ইউরোপ এবার খুব সহজেই সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে।
এ নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক জেমস নিক্সি সিএনএনকে বলেন, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটি কী হবে, তা নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। এখন রাশিয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক বাস্তবিক সমস্যা, যার বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া একদিকে সেনা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা নেতাদের উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যও বাড়ছে। গত ২৩ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিএনএনকে জানান, যেকোনো হামলার জন্য রাশিয়ার ভয়াবহ পরিণতি হবে।
এদিকে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি দ্বিগুণ করার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সব মিলিয়ে দুই পক্ষ থেকেই এমন সব বক্তব্য আসছে, যা উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা নিয়ে পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলা চালানো হলে বড় মূল্য চোকাতে হবে রাশিয়াকে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ইউক্রেন ইস্যুতে একটি সামরিক ঐক্য তৈরি হচ্ছে ইউরোপে।
জেমস নিক্সি যেমন বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ইউক্রেনে রাশিয়ার কত সেনা পাঠাবে, তার ওপর। অনেক বিশ্লেষক এখনো আশাবাদী যে, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব। ইউক্রেনে হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব পড়বে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ও বাল্টিক রাজ্যগুলোয়।
তবে এই সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে ছাড় দেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন জেমস নিক্সি। তাঁর মতে, সংকট নিরসনের জন্য রাশিয়াকে যদি আবারও সীমানা পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়, বা এমন আচরণে নিরুৎসাহিত করা না হয়, তবে তারা একেই একটি উপায় হিসেবে বেছে নেবে। তারা তখন খুঁজবে এর পর অনুরূপ পদক্ষেপ কোন অঞ্চলের জন্য নেওয়া যায়।
একই কথা বলেছেন ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর অনেক দেশের সীমান্ত রয়েছে। এ নিয়ে অনেক উদ্বেগের বিষয় থাকবে। কারণ, যুদ্ধ হলে এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতে পড়বে। আর এতে ওই সব দেশের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হবে।
মোদ্দা কথা ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর মুখোমুখি রাশিয়া যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তার সমাধান খুব একটা সহজ পথে আসবে না বলেই মনে হচ্ছে। এর সমাধানের পথটি কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এ বিষয়ে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়ার ওপর। শুরুতেই স্টলটেনবার্গের সর্বশেষ বক্তব্যের সূত্র ধরে, যা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। ন্যাটো জোট বিষয়টি নিয়ে সতর্কাবস্থায় রয়েছে—এটা স্পষ্ট।
ইউক্রেন ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য আবেদন করে। এর পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বাড়ে এই উত্তেজনা। তবে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলোকে রক্ষার জন্য হলেও পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন করবে ন্যাটো।
এর ইঙ্গিত অবশ্য গত ২৩ জানুয়ারিই পাওয়া গিয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সেদিন জানিয়েছিলেন, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সেনা পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক অবস্থানের কথাও সেদিন জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন মার্কিন কর্মকর্তা পরে সিএনএনকে বলেন, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক নিল মেলভিনের মতে, ন্যাটোর সামরিক জোটকে এই যুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদেরকে ঘিরে পুরো যুদ্ধের কৌশল সাজাতে হবে। আর এটি ইউরোপে অনেক বড় পরিবর্তন আনবে। মেলভিনের ধারণা, যুদ্ধ হলে প্রচুর সেনার প্রয়োজন হবে। আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন সেনা আনতে হবে, যা ইউরোপে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এ তো জানা কথাই যে, যুদ্ধের পেছন পেছন আসে অর্থনৈতিক সংকট। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে দেশটির কৃষিজাত পণ্য সরবরাহে বাধা তৈরি হবে, যা খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাবে। আর এই সংকটের সঙ্গে ইউক্রেন যেহেতু জড়িয়ে, তখন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আরও বেশি। কারণ, বিশ্বের অন্যতম চারটি শস্য রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন্স কাউন্সিলের তথ্যমতে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের ভুট্টা আমদানির ছয় ভাগের এক ভাগই হবে ইউক্রেন থেকে। সুতরাং এই দেশে হামলা চালানো হলে পুরো বিশ্বের খাদ্য সরবরাহেই প্রভাব পড়বে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা। কারণ, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে, সেগুলো হলো—রাশিয়া, নরওয়ে, আলজেরিয়া ও কাতার। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে আসে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ ও নরওয়ের কাছ থেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি যেসব দেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আসে, তা শতাংশের হিসাবে ১০-এর কম। একই চিত্র অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রেও।
এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় এসেছে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন। রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে এই পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে জার্মানি পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি দুই দেশই বলছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন চালুর কাজ পিছিয়ে যাবে।
ফলে জ্বালানি প্রশ্নটি অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে। এ বিষয়ে নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, আপনি যদি বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সরবরাহকারী দেশের সঙ্গে বড় সংঘর্ষের কথা ভাবেন, তাহলে বড় কোনো প্রভাব ইউরোপের জ্বালানির বাজারে পড়বে না—এমনটি ভাবা আপনার উচিত নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে ইউরোপের এই জ্বালানি নির্ভরতাকে রাশিয়াও যুদ্ধে কাজে লাগাবে। এরই মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেই নির্ভরতাকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত ২৯ জানুয়ারি জানায়, ইউরোপে রাশিয়া তার গ্যাস রপ্তানি হ্রাস করেছে। এতে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব আমেরিকার তথ্যমতে, জ্বালানি খরচের মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে ইউরোপের লাখ লাখ বাড়িতে আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর একজন ভোক্তাকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৫ ডলার বেশি খরচ করতে হবে জ্বালানির জন্য। আর পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ হলে বেশ কয়েকটি দেশের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে।
অ্যালেক্সাই নাভালনি : ভ্লাদিমির পুতিনের আতংক
জ্বালানি এই মুহূর্তে ইউরোপের আরেকটি বড় উদ্বেগ। রাশিয়ার জন্যও হতে পারত। তবে ততটা হচ্ছে না। কারণ, ইউরোপের বাজার নিয়ে সমস্যা হলেও রাশিয়া চীনে জ্বালানি সরবরাহ করে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে। সম্প্রতি চীনে রাশিয়ার কয়লা ও গ্যাস সরবরাহও বেড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি এই সরবরাহ আরও বাড়াবে। অর্থাৎ, রাশিয়া ইউরোপ বিমুখ হয়ে উঠবে। এটা একটা বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেবে। এতে বিপদে পড়বে ইউরোপই। কারণ, তাদের সামনে বিকল্প তৈরির জন্য সময় বেশি থাকবে না। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে নজর যাবে। আর মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপকে নজর দিতে হলে সংকটে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি করে জড়িয়ে যাবে, যা অবধারিতভাবেই ময়দানে টেনে আনবে চীনকে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এখন আর অপ্রকাশ্য কিছু নয়। এরই মধ্যে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেনে হামলা চালানো হলে রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যা রুশ ব্যাংগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ছাড়া তাদের তেল, গ্যাস ও প্রযুক্তি খাতেও প্রভাব ফেলবে এই নিষেধাজ্ঞা। তবে এটি শুধু রাশিয়াকে নয়, গোটা ইউরোপের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
এ ক্ষেত্রে মোক্ষম কথাটি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি নাথান সেলস। তাঁর মতে, যেকোনো সময় আপনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তবে এতে আপনার নিজের, বন্ধু ও মিত্রদের ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
বিষয়টি নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী পক্ষও জানে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও সময়ের সঙ্গে এর কড়াকড়ি কমে আসে। কারণ, টিকে থাকার প্রশ্নটি উভয়ের সামনেই রয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে রুশ ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এখন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পশ্চিমাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য এবার যুদ্ধ বাধলে এ সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, যা উভয় পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধের দামামা পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনুভূত হবে। কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া এই যুদ্ধে জয় পেলে অন্যান্য দেশও সীমান্তে একই রকম কৌশল নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন ভূরাজনৈতিক ছক সামনে হাজির হতে পারে। সে ছকে নিশ্চিতভাবেই চীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকতে উল্লেখ করার মতো।