সামরিক অভ্যুত্থানের পর আসলে কী হচ্ছে মিয়ানমারে?

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ৫০ বছরের বেশি সময় থেকেছে সেনা শাসনের অধীনে।  ২০২০ সালের নভেম্বরে  পার্লামেন্টারি নির্বাচনে ৪১২ আসনের মধ্যে ৩৪৬টিতে বিজয়ী হয় এনএলডি এবং সেনা-সমর্থিত ইউএসডিপি জিতেছিল ৩৩ আসন।

নির্বাচনে ভরাডুবির পর দেশটির সামরিক বাহিনী ‘কারচুপি’র অভিযোগ তোলে। সেসময় থেকে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। তখন থেকে সেনা অভ্যুত্থানের গুঞ্জন ওঠে। অবশেষে সেই গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয়। সামরিক অভ্যুত্থানের পর আসলে কী হচ্ছে মিয়ানমারে- তা জানাব এই প্রতিবেদনে।

লেখাটিতে যা আছে.... লুকিয়ে রাখুন

স্বস্তিতেই আছে সামরিক জান্তা

মিয়ানমারজুড়ে পরিস্থিতি যত খারাপই হোক, আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিসরেও সামরিক জান্তার জন্য এখনো বড় কোনো অস্বস্তি তৈরি হয়নি। চীনের পাশাপাশি রাশিয়াও তাদের ভালোভাবে মদদ দিচ্ছে। জাপান ও ভারতের মতো বড় শক্তিরাও বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শুরু করেনি।

মিয়ানমারের স্থিতিশীলতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারতের স্বার্থ সরাসরি জড়িত। তারা দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পক্ষে। তবে সেনাবাহিনীকে রুষ্ট না করে তা নিশ্চিত করায় ভারতের আগ্রহ বেশি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জান্তা সরকার খুব শিগগির ক্ষমতা থেকে নামবে না। বিশেষত চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলো যত দিন তাদের সমর্থন দেবে, তত দিন সু চির মুক্তির আশা ক্ষীণ।

জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব পাস

জাতিসংঘে ১৯৯টি দেশের স্বাক্ষরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে, যাতে জান্তা সরকারকে মিয়ানমারের নির্বাচনের ফল মেনে নিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সু চিসহ সব রাজবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই প্রস্তাবে চার বছর আগে মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করার বিষয়ে কোন কথা বলা হয়নি।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সুচির ছবি নিয়ে প্রতিবাদ

মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান 

মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।  জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সাধারণ পরিষদকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নিতে চাপ দিয়েছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করতে পারি না যেখানে সামরিক অভ্যুত্থান একটি আদর্শ হয়ে ওঠে। এটা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।’

মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গনার ভোটের পর সাধারণ পরিষদকে বলেন, ‘মিয়ানমারে বড় আকারের গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে। সময় এখন মূল বিষয়। দেশটিতে সামরিক অধিগ্রহণ থেকে বের হওয়ার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।’

বাস্তুচ্যুত ২ লাখ ৩০ হাজার

জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারে জান্তা সরকারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমারের কারেন অঞ্চল।

থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্তঘেঁষা রাজ্যাটিতে এরই মধ্যে ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু গত মাসেই ঘরছাড়া হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। ভারতের সীমান্ত লাগোয়া শিন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন ও শান রাজ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজারো মানুষ।

মিয়ানমারের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাজ্যের

মিয়ানমারে ষষ্ঠ দফায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। নতুন ঘোষিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘সেনাবাহিনী কর্তৃক বৈধভাবে গঠিত’ স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল (এসএসি) তথা সামরিক প্রশাসনের অর্থনৈতিক স্বার্থকে খর্ব করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন এই নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান টিম্বার এন্টারপ্রাইজ ও মিয়ানমার পার্ল এন্টারপ্রাইজের ওপর আরোপ করা হবে। প্রতিষ্ঠান দুটোর যুক্তরাজ্যে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে মিয়ানমারের সামরিক শাসক লাখ লাখ রাজস্ব আয় করে।

 মিয়ানমার জান্তাপ্রধানের মস্কো-জাকার্তা  সফর

নিজের দ্বিতীয় বিদেশ সফরে রাশিয়া গিয়েছিলেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। রাজধানী নেপিদো থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে রওয়ানা দিয়ে মস্কোতে পৌঁছান তিনি।  ২২ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত মস্কোতে তিন দিনের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক সম্মেলনে অংশ নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তিনি।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গিয়েছিলেন মিন অং হ্লাইং। মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান ছাড়াও সে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশের প্রতিনিধিরা। সেসময় তারা মিয়ানমারের বর্তমান সংকট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।

জাতিসংঘের প্রস্তাব মিয়ানমারের প্রত্যাখ্যান

সেনা অভ্যুত্থানের পর সাধারণ জনগণের ওপর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের ঘটনায় মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির জান্তা সরকার।

বর্মি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একপাক্ষিক অভিযোগ ও ভুল ধারণার’ ভিত্তিতে এটি করা হয়েছে। এই প্রস্তাব মেনে চলার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই বলেও জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানের নেতা

অবসরে যাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং

১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতার গদিতে বসা সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সামনের জুলাই মাসেই অবসরে যাচ্ছেন। তবে এরই মধ্যে তিনি সরকারবিরোধিতার জন্য শত শত লোককে হত্যা করেছেন এবং বিরোধী পাঁচ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে জেলে ঢুকিয়েছেন।

বিরোধীদের ওপর কামান ও বিমান হামলা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির পূর্বাঞ্চলে কামান ও বিমান ব্যবহার করে সামরিক শাসন বিরোধী স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক লড়াইয়ের ফলে অনেক বাসিন্দা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং হাজারো মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকে জঙ্গলে পালিয়ে গেছেন এবং তাদের খাবার ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।

আটকই রয়েছে সু চি

বিপুল ভোটে জয়ী সু চির সরকার যেদিন শপথ নিতে যাবে, সেই দিনই সেনা অভ্যুত্থান ঘটে এবং সু চিকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী উসকানি দেওয়ার অভিযোগে মামলাও করা হয়।

মিয়ানমারে সেনা শাসনের বিরোধিতায় জি ৭

মিয়ানমারে সামরিক শাসন ও দমননীতির বিরোধিতা করল জি৭।  জি৭-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত কোনোভাবে মানা যায় না। তাঁদের আবেদন, সেনা যেন খুবই সংযত থাকে এবং মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে।

নিন্দায় কর্ণপাত করেনি সামরিক জান্তা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিশ্বের একাধিক দেশ পুলিশ এবং সেনার নিন্দা করছে। কিন্তু তাতেও হেলদোল নেই সেনা শাসকদের। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনা এবং নিরাপত্তবাহিনীর আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। সমস্ত মৃত্যুর দায় তাদের নিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহসী গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের পাশে আছে।

গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে মাগওয়ে এলাকায় কিন মা গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় গেরিলাদের সংঘর্ষের পর মধ্যাঞ্চলের ওই গ্রামটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রামটিতে আগুন ধরিয়ে দিলে গ্রামটির ২৪০টি ঘরের মধ্যে ২০০টিই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনায় অন্তত দুজন দগ্ধ হয়ে মারা যান।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

মিয়ানমারের এইয়ারওয়াদি নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সংঘর্ষে ‍অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। সেনা সদস্যরা অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি শুরুর পর গ্রামবাসীরা গুলতি ও তীর-ধনুক নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে অনেক গ্রামবাসী হতাহত হয়।

বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র গেরিলা তৎপরতাও বেড়েছে

সশস্ত্র গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি

সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এছাড়া এরপর থেকে বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র গেরিলা তৎপরতাও বেড়েছে। সেনাবাহিনী এবং সামরিক শাসন বিরোধী স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে কয়েক দশকের পুরনো বিরোধগুলো পুনরায় জাগ্রত হয়েছে। ছায়া সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনীর ওপর।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে নবগঠিত মিলিশিয়া দলের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনী সাঁজোয়া যান ব্যবহার করেছে। মিয়ানমারজুড়ে ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ বলে পরিচিত সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী দলগুলোর আবির্ভাব ঘটতে শুরু করেছে।

মিয়ানমারে কবি ও কবিতাও রক্তাক্ত

মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জান্তা সরকার আটক করেছে কবি সাহিত্যিক শিল্পীদেরও। খ্যাতিমান কবি ক জে উইন ও কাই জাও আয় দুজনেই রাজপথে নেমেছিলেন গণতান্ত্রিক মুক্তির লড়াইয়ে। সুন্দরের কবি কেথকে শুধু মেরেই ফেলা হয়নি, কেটে নেওয়া হয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নৌকায় প্রতিবাদ

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ইনলে লেকের কাছের বাসিন্দারা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দাবিতে এক অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন৷ সব শ্রেণির মানুষ নৌকায় করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন৷ তাদের হাতে ছিল মেগাফোন এবং প্ল্যাকার্ড৷

প্রতিবাদকারীরা সমস্বরে বিপ্লবী গানও গেয়েছেন৷ পশ্চিমা দেশগুলো অভ্যুত্থানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং সু চিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করেছে৷ ইনলা লেকের প্রতিবাদকারীরা এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা একটি ভালো ব্যাপার৷ তবে তারা আবারও ঊধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে রাজি নন, যা সু চির নীতি ছিল৷

রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিলো জাতীয় ঐক্যের সরকার

মিয়ানমারের বিরোধী দলগুলোর ‘জাতীয় ঐক্যের সরকার’ হঠাৎ রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফ থেকে অনেক চাপ সত্ত্বেও মিয়ানমারের যে রাজনীতিকরা রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি দিতে রাজী হয়নি, হঠাৎ করে তাদের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন বেশ বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

এনইউজি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে নীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেশ কয়েকটি অঙ্গীকার করেছে তারা।

প্রথমত, এতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গারা যে হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তার স্বীকৃতির পাশাপাশি যারা এর জন্য দায়ী, তাদের বিচারের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিচারের এখতিয়ার দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর অঙ্গীকার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: এতে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন/বিলোপের অঙ্গীকার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হরণের ক্ষেত্রে এই আইনটিকে ব্যবহার করে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ।

তৃতীয়ত: এই ঘোষণায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি মেনে চলার অঙ্গীকার আছে।

রোহিঙ্গাদের তথ্য মিয়ানমারে পাচার

মিয়ানমামে চরম নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তথ্য অযাচিত অসঙ্গতভাবে সংগ্রহ করেছে জাতিসংঘ। পরে কোনো ধরনের সম্মতি না নিয়েই রাখাইনের এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর তথ্য মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ এনে এ ঘটনায় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর নিবন্ধন করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা। রোহিঙ্গাদের সেবা ও সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজনে তাদের পরিচয়পত্র সরবরাহে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের ব্যবহারের জন্য সংগৃহীত এসব তথ্য মিয়ানমারকেও দেওয়া হচ্ছে। এসব তথ্য প্রতিবেশী মিয়ানমারকেও যে দেওয়া হবে—তা রোহিঙ্গাদের অবগত করা হয়নি।  শরণার্থীদের বোঝার উপায় ছিল না যে ছবি, আঙুলের ছাপ ও বায়োগ্রাফিক উপাত্ত নেওয়া হচ্ছে, তা মিয়ানমারকেও দেওয়া হবে।

নতুন আইনি দল করল মিয়ানমারের জান্তা

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার আইনি প্রতিনিধিদলে পরিবর্তন এনেছে মিয়ানমার। দেশটির ক্ষমতাচ্যুত স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির পরিবর্তে ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির সামরিক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উনা মং লুইন। সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় পাঁচ মাসের মাথায় এসে মিয়ানমারের সামরিক সরকার এই পরিবর্তন আনল।

মিয়ানমারের আট সদস্যের ওই আইনি প্রতিনিধিদলে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে চারজন সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। এঁরা হলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী উনা মং লুইন ও অর্থমন্ত্রী উইন শেইন এবং দুই লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ার পায়ে ও মিউ জ থেইন। অন্যরা হলেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী কো কো লায়েং, অ্যাটর্নি জেনারেল থিডা ও, পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী চ মিউ টুট ও খিন ও’ লায়েং।

ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত  হওয়ার পথে মিয়ানমার

নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সাবেক জাতীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন দ্য এলডারস মঙ্গলবার মিয়ানমারের জান্তার ওপর আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মেরি রবিনসন বলেন, “মিয়ানমার বর্তমানে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার একটি বিপদজনক পথে রয়েছে। “উদ্যোগ নিতে ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে অভ্যুত্থানকে সফল হতে দিলে এটা আন্তর্জাতিক আইন-ভিত্তিক শৃঙ্খলা ব্যবস্থার আরও অবমূল্যায়ন করবে।”

সামরিক শাসকদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সমঝোতা

মিয়ানমারে সেনা শাসন শুরু হওয়ার পর মালয়েশিয়া সেদেশের সামরিক শাসকদের সঙ্গে সমঝোতা করে। জাহাজ ভর্তি করে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো নিয়ে সমঝোতা হয়।

মিয়ানমারে আন্দোলন অব্যাহত

গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছে সেনা। তারপর থেকেই গণতন্ত্রপন্থিরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে। মূলত ছাত্র এবং যুব সমাজের বড় অংশ এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে এবং জেলবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

প্রথম দিন থেকেই কড়া হাতে আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করছে পুলিশ। লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। জল কামান ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকী, রবার বুলেটও ব্যবহার করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে পুলিশ।

আহত বিক্ষোভকারীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে গিয়েও তাণ্ডব চালায় পুলিশ। আহত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিদিনই আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। সেনা শাসকরা জানিয়েছেন, আন্দোলনের জন্য গ্রেফতার হলে এখনই মুক্তি মিলবে না। আপাতত জেলেই থাকতে হবে।

মানুষ কেন বিক্ষোভ করছে?

সাধারণ নির্বাচনের পর এনএলডি পার্টি বিপুল ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর গত ১লা ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। সামরিক বাহিনী বিরোধী একটি দলকে সমর্থন দিচ্ছে, যারা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

পার্লামেন্টের নতুন অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে আগে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনাটি ঘটে। সু চি গৃহবন্দী রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ওয়াকি-টকি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এনএলডির আরও অনেক নেতাও আটক রয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা সু চির মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে।

মিয়ানমারের বৈধ সরকার দাবি

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর লুকিয়ে থাকা রাজনীতিবিদরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম চলবে। এনএলডির যে এমপিরা গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন, তারা পালিয়ে নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন, যার নাম কমিটি ফর রিপ্রেজেন্টিং পাইডুংসু হলত্তু (সিআরপিএইচ), যার ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাহন উইন খিয়াং থান।

লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিকদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির প্রধান মাহন উইন খিয়াং থান বলেছেন, ”এটা জাতির জন্য সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহূর্ত তবে খুব তাড়াতাড়ি আলোর দেখা পাওয়া যাবে।” একদল আইন প্রণেতাকে নিয়ে লুকিয়ে রয়েছেন মি. থান, যারা গত মাসের অভ্যুত্থান মেনে নেননি। তারা নিজেদের মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে দাবি করছে।

রাজপথে আত্মত্যাগ আর আতংক

মিয়ানমারে গণ-বিক্ষোভ যেরকম সহিংসতার সঙ্গে দমন করা হচ্ছে, তার মধ্যে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে অনেক ধরণের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। ডাক্তারদের পালাতে সাহায্য করছেন যে মেডিক্যাল কর্মকর্তা। কন্যার ভবিষ্যতের জন্য লড়ছেন মা। ক্যামেরার পেছনের মানুষটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তোলছেন, ভিডিও করছেন। অনেকে সামরিক বাহিনীর ফাঁদে আটকে পড়ছেন। অনেকে গুলিতে নিহত হচ্ছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।

মিয়ানমারে হত্যা ও গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি তিনি শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ বিবৃতিতে তিনি আরো বলেছেন, ‘‘মিয়ানমারকে প্রতিবাদকারীদের হত্যা এবং গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে৷’’

অবরোধে অভ্যস্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনী

জাতিসংঘে মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গানার বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান সো উইনকে তিনি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ না করলে সেনাবাহিনীকে কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন৷ তবে তিনি জানান, জবাবে সো উইন বলেছেন, ‘‘আমরা অর্থনৈতিক অবরোধে অভ্যস্ত হয়ে গেছি৷ ওসব সহ্য করেই আমরা টিকে আছি৷’’

মিয়ানমারের যোদ্ধারা ঢুকছে ভারতে

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের দমনাভিযানের মুখে হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ঢুকছে। তাদের মধ্যে অনেক সময় ঢুকে পড়ছে গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধারাও। এ নিয়ে উদ্বেগে আছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। তাদের আশঙ্কা, অঞ্চলটি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি কর্মীদের সক্রিয়তার মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

জান্তাবিরোধীদের এক ট্রাক অস্ত্র জব্দ

মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী মান্দালয়গামী বিদ্রোহীদের এক ট্রাক ভর্তি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জব্দ করেছে। এসময় চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  নিরাপত্তাবাহিনী বোমা ও ডেটোনেটরসহ শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র, ১০ হাজার রাউন্ড গুলি এবং ৪৯৯টি গ্রেনেড জব্দ করেছে।

জান্তাবিরোধীরা একটি সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলেছে। এটি পিপল’স ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) নামে পরিচিত। এই বাহিনীর সদস্যরা হালকা অস্ত্র ও সীমিত প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামীণ এলাকা বা ছোট শহরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। গ্রেফতারকৃতরা সামরিক শাসনের বিরোধিতা করা পিডিএফ সদস্যরা কচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ)-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং অস্ত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

আক্রান্ত হচ্ছেন সেনাবাহিনীর সোর্সরা

গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ৯ সোর্সকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।  মিয়ানমারে স্থানীয় ওয়ার্ড প্রশাসকরা সেনাবাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করায় প্রায়ই অভ্যুত্থানবিরোধী কিংবা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।

বিদ্রোহী-সেনার মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কারেন রাজ্যের রাজধানী হপা আনের চারটি স্থানে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গুলিতে ৮ সেনা নিহত হয়। ‘কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন’র সশস্ত্র বাহিনী। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা কারেন ফোর্স ব্রিগেড-১ অঞ্চলের আওতাভুক্ত লে তাও গি, গুহ বি হিতি এবং মি বন ইনেতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।

নিজের বিপক্ষেই ভোট দিয়েছে মিয়ানমার

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গৃহীত জাতিসংঘের রেজুলেশনে ভোটাভুটিতে পক্ষে ভোট দিয়েছে খোদ ওই দেশটি। অবাক করা এই বিষয়টি আসলে বিস্ময়কর নয় কারণ জাতিসংঘে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারি স্থায়ী প্রতিনিধি (পার্মানেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের বিদ্রোহী ন্যাশনাল ইউনিটি সরকারের পক্ষে কাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউ ইয়র্কে কর্মরত একজন কূটনীতিক বলেন, ‘মিয়ানমারে ক্যু হওয়ার পরে জাতিসংঘে তাদের রাষ্ট্রদূত পক্ষ ত্যাগ করে বিদ্রোহী ন্যাশনাল ইউনিটি সরকারের পক্ষে কাজ করছে। ওই ব্যক্তি প্রায়শই সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দিয়ে মিয়ানমারে হামলা বা আক্রমণ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে থাকেন।’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর খড়্গ

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর খড়্গ চালাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। ডিভিবি, মিজিমাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের লাইসেন্সও ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ দমনের নানা উপায় বেছে নিয়েছে জান্তা।

সাংবাদিকদের বিচারে ঔপনিবেশিক আমলের একটি দমনমূলক আইন সক্রিয় করেছে সরকার। মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় মায়েক শহরের সামরিক আদালত বুধবার সাংবাদিক অং খিয়াও এবং জাও জাওকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। খিয়াও সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা (ডিভিবি) এবং জাও মিজিমার সাংবাদিক।

পালিয়ে জঙ্গলে লাখো মানুষ

মিয়ানমারে সাম্প্রতিক লড়াই সহিংসতায় দেশের ভেতরে উদ্বাস্তু হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। তারা পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে জঙ্গলে। জঙ্গলের কিছু শিবিরে আশ্রয় নিয়ে আছে অল্পসংখ্যক মানুষ। আবার কিছু শিবিরে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্লাস্টিক শিটের নিচে গাদাগাদি করে মাথা গুঁজে তারা বৃষ্টি-বাদল থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছে।

তারা খাদ্য সংকটে আছেন। ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে রোগ। শিশুদের অনেকে ডাইরিয়ায় ভুগছে। পরিষ্কার পানির অভাব। অনেকে চাল কিংবা খাবার আনার সুযোগও পাচ্ছেন না। জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া অনেক মানুষই বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বাড়িতে থাকার চাইতে জঙ্গলের ক্যাম্পে থাকাই নিরাপদ ভাবছেন।

মিয়ানমারে বিদ্রোহীরা তৈরি করছে বর্ণিল ঐক্য

মিয়ানমারে সেনা নেতৃত্বে জাতিগঠন প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। দেশকে এক করার বদলে তারা বরং আরও বিভক্ত করছে। উল্টোদিকে সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বিদ্রোহীরা তৈরি করছে এক বর্ণিল ঐক্য। বর্মী ও বৌদ্ধরা সেখানে অপর জাতি ও ধর্মের মানুষকে প্রান্তিক করে রেখেছিল।

এই প্রথম আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধ, কারেন ও শিন প্রদেশের খ্রিষ্টানদের সঙ্গে বড় জাতির বর্মী বৌদ্ধদের সংহতি গড়ে উঠছে। গড়ে উঠেছে আরাকান আর্মি, কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি, তা’য়াঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির সামরিক জোট নর্দার্ন অ্যালায়েন্স।

তথ্যসূত্র

সিএনএন
রয়টার্স
আলজাজিরা
এএফপি
বিবিসি
বিবিসি বাংলা
ডয়েচে ভেলে
এপি
মিয়ানমার গেজেট
ইরাবতী
মিয়ানমার নাউ
দ্য ডিপ্লোম্যাট
আল–জাজিরা
দ্য গার্ডিয়ান
দ্য ডেইলি স্টার
এশিয়া টাইমস
প্রথম আলো

Exit mobile version