প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান -এর নেতৃত্বে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা, অর্থনীতি এবং বৃহৎ বিনিয়োগসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নতি করছে তুরস্ক। এরদোগান এক ন্যায্য লক্ষ্যে স্থির ছিলেন এবং এখনও আছেন। তুর্কি রাষ্ট্র ও তার স্থানীয় অর্থনীতির জাতীয় সক্ষমতার পরিচর্যা ও উন্নয়নের মাধ্যমে এরদোগান বিশ্বের সামনে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
মানবাধিকার, রাজনীতি, ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমতায় ইসলামী আদর্শের প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট তিনি। বিশ্বের অনেক দেশের কাছে এরদোগান একজন কড়া শাসক হলেও মুসলিম বিশ্বের কাছে তিনি হয়ে উঠছেন অঘোষিত নেতা, অভিভাবক। তুরস্কের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বেরও উন্নতি চায় এরদোগান।
মুসলিম বিশ্বের উন্নতি চান এরদোগান
মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ও শক্তিমত্তার প্রয়োগ করে অবিসংবাদিত অবদান রেখেছেন এরদোগান। তিনি সবসময় দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান। এরদোগান সিরিয়া, মায়ানমার, কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন নিয়ে সব সময় সরব থেকেছেন। এছাড়া মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কুয়ালালামপুর সম্মেলনেরও আয়োজন করেছেন এরদোগান।
এরদোগান ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচক
এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তুরস্কের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় আবারো ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মুসলিম বিশ্বের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুনরায় জাগিয়ে তোলেন তিনি। তুরস্কের অর্থনীতির স্বার্থে আরব দেশগুলোর সাথে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছে ছিল।
বর্তমান তুরস্কে দেশটির সেনাবাহিনী পুরোপুরি বেসামরিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে। এরদোগান প্রকাশ্যে আমেরিকার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। ইসরাইলকে ‘একটি সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের অবরোধ ও হামলা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন তিনি। গাজাকে একটি ‘উন্মুক্ত কারাগার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
ইসরাইলকে নিয়ে এরদোগানের এসব বক্তব্য ফিলিস্তিন এবং জর্ডানে তার ভক্ত বাড়িয়েছে। এরদোগানকে দেখা হয় এমন এক ব্যক্তি হিসেবে যিনি ইসরায়েল এবং আমেরিকার সামনে দাঁড়িয়েছেন এবং নিজ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছেন।
রোহিঙ্গাদের পক্ষে সোচ্চার এরদোগান
এরদোগান সরাসরি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। এরদোয়ানের মতো এতোটা জোরালো অভিযোগ অন্য কোন রাষ্ট্র প্রধান করেননি।
তিনি সরাসরি ফোন করে মিয়ানমারের তৎকালীন সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চি’র কাছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছিলেন।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সচক্ষে দেখতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান ঢাকায় এসেছিলেন।
উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে এরদোগান
চীনে নির্যাতিত উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এরদোগান। চীনের ওই বন্দিশিবিরগুলোয় নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি ।
এরদোগান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা এখন আর গোপন নেই যে ১০ লাখেরও বেশি উইঘুরকে বন্দী রাখা হয়েছে। এটা মানবতার জন্য লজ্জাকর।
এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় বন্ধে জাতিসংঘকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় তুরস্ক।
কাশ্মীরের মুসলমানদের পক্ষে এরদোগান
জাতিসংঘে কাশ্মীর ইস্যুটি তুলে ধরেছেন এরদোগান। বলেন, কাশ্মীর ইস্যু দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির ‘মূল চাবিকাঠি’। এটি এখনো তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয়। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্তির পর যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা এ সঙ্কটকে আরও জটিল করবে। জাতিসংঘের প্রস্তাব ও কাশ্মিরের মানুষের প্রত্যাশা মেনে এই সমস্যার সমাধান করা দরকার।
এরদোগান বলেন, আমাদের কাশ্মীরি ভাই-বোনেরা দশকের পর দশক ধরে কষ্ট সহ্য করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সিদ্ধান্ত তাঁদের এই কষ্ট আরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। পকিস্তান বরাবর কাশ্মীরিদের পাশে থেকেছে। এই সময় এমন একটা সমাধানের প্রয়োজন, যা সবার জন্য ভাল হয় ও শান্তি বজায় থাকে। কাশ্মীর নিয়ে ঠিক যতটা চিন্তা, ততটাই চিন্তা আমাদের।
আল আকসায় হামলার নিন্দায় এরদোগান
এরদোগান বলেন, যারা নিজেকে মানুষ মনে করে তিন ধর্মের পবিত্র স্থান জেরুজালেমের ওপর হামলা করার বিরোধিতা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। চুপ করে থাকা আর ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেয়া একই কথা এবং ফিলিস্তিনির ওপর হামলায় সায় দেয়া। জেরুসালেম নিজেই একটি পৃথিবী এবং মুসলিমরা সেখানকার বাসিন্দা। পবিত্র জেরুসালেম সম্মান শ্রদ্ধা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেখানকার মসজিদ আল-আকসায় হামলা করা মানে আমাদের ওপর হামলা করা।
মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে এরদোগানের চেষ্টা
এরদোগান মুসলিম বিশ্বকে ফিলিস্তিন বিষয়ে একটি অভিন্ন মতামতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, এবং বেশির ভাগ দেশই তার পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে বা গ্রহণ করার মনোভাব দেখিয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সাথেও এ বিষয়ে আলোচনা করেন এরদোগান।
তিনি আফগানিস্তান ও কিরগিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাথেও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং তাদেরকে ইসরাইলবিরোধী জনমতে অংশগ্রহণ করার তাগিদ দেন। তুর্কি প্রেসিডেন্টের সাথে এ দুটি দেশ একমত পোষণ করে।
সুদানে বিনিয়োগ করেছিল তুরস্ক
সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের শাসনামলে দেশটি যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তখন দেশটিতে তুরস্ক বিনিয়োগ করেছিল। এজন্য সুদানের মানুষ কৃতজ্ঞ।
মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে এরদোগান
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বেশ স্পষ্টভাবে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সামালোচকরা এরদোগানের পক্ষে সমর্থন জানান।
আরব দেশগোলোতেও জনপ্রিয় এরদোগান
একটা সময় পশ্চিমা দেশগুলোও এরদোগান সম্পর্কে অনেক উচ্চ ধারণা পোষণ করতো। ২০১১ সালে যখন আরব বসন্তের সূচনা হয় তখন সে অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে উঁচু আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তুরস্ককে একটি ‘মডেল দেশ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
বলা হয়েছিল- তুরস্ক হচ্ছে একটি ‘শক্তিশালী গণতন্ত্রের’ দেশ যেখানে প্রকৃতপক্ষে একজন নির্বাচিত নেতা আছে। এছাড়া তুরস্কের অর্থনীতি সমগ্র আরব অর্থনীতির প্রায় অর্ধেকের সমান। অধিকাংশ আরব এখনো এরদোগানের সাথে আছে।
আফগানিস্তানে কী চায় তুরস্ক?
সংঘাতমুক্ত আফগানিস্তান
প্রায় ৫০ বছর ধরে সংঘাতে জর্জরিত আফগানিস্তানে অনেক সশস্ত্র গ্রুপ তৈরি হয়। আফগানিস্তানে তালেবান ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সমর্থনে অনেক গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইরান, সৌদি আরব, এমনকি ভারতের সমর্থিত গ্রুপ আছে ওখানে। সুতরাং আমেরিকা পরবর্তী আফগানিস্তান সংঘাতমুক্ত থাকবে না। এমতাবস্থায় তুরস্ক চায় এসব সশস্ত্র গ্রুপ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে দেশকে সংঘাতমুক্ত করবে।
সকল সংঘাতের অবসান
আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরের ক্ষমতায় থাকা পশ্চিমাদের পুতুল সরকারের আমলা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্যসব সরকারি অফিসারদের ভাগ্য অনিশ্চিত। তালেবান ক্ষমতায় আসলে তাদের তাদেরভাগ্যে কী ঘটবে সেটা অজানা। তাই সংঘাতের অবসান ঘটায়ে দেশটির অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা কমিয়ে আনতে চায় তুরস্ক।
কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব
মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগের পর কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তুরস্ক চায় ২০ বছরের যুদ্ধবিধস্ত দেশ আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার পরবর্তী সংঘাতের অবসান হোক। কারণ আমেরিকা বা ন্যাটোর সৈন্যরা চলে গেলেও আফগানিস্তানে শান্তি অনিশ্চিত।
আফগানিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলে আফগান মুজাহিদ গ্রুপগুলোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত চার বছর ধরে চলা সেই লড়াইয়ে নিহত হয় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ।
এই লড়াই বন্ধে সৌদি আরব বাদশা ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালের ১২ই মার্চ রমজানের আগের দিন মুজাহিদ গ্রুপগুলোকে একত্র করে পবিত্র কাবা শরিফের মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে তারা একটি চুক্তি সই করেন। সেই চুক্তিপত্র তখন কাবা শরিফের দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হয় যেন কোনও মুজাহিদ গ্রুপ এই চুক্তি ভঙ্গ করার সাহস না পায়।
অথচ তাদের বহনকারী বিমান আফগানিস্তানের মাটিতে স্পর্শ করার আগেই সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। কাবার গায়ে টানানো সেই চুক্তিপত্রও আফগানিস্তানে শান্তি নিয়ে আসতে পারেনি। তুরস্ক চায় সেই ঘটনার পুনরাবৃতি না হোক। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ফিরে আসুক আফগানিস্তানে।
পাকিস্তানকে পাশে চায় তুরস্ক
তুরস্ক চায় আমেরিকা পরবর্তী আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে যতটুকু সম্ভব অবদান রাখা। একারণেই তুরস্ক পাকিস্তানকে পাশে রাখতে চায়। পাকিস্তান এ বিষয়ে একটু ইতস্তত করলেও তুরস্কের প্রস্তাব ফেলে দিতে পারবে না। তুরস্কের কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে আসল ট্রাম্পকার্ড হচ্ছে পাকিস্তান।
তুরস্কের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না তালেবান
কোনো সমুদ্রসীমা এবং সমুদ্র বন্দর না থাকা যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিন্তানের বহির্বিশ্বে সহজ যোগাযোগের একমাত্র পথ কাবুল এয়ারপোর্ট। তুরস্ককে এই কাবুল বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তুরস্ক বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিলেও আমেরিকা এবং ন্যাটো জোটকে বড় কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এর অন্যতম শর্ত হলো-তুরস্ক এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং ন্যাটো সদস্য হাঙ্গেরিকে সাথে নিবে। আর ন্যাটোকে তা মেনে নিতে হবে। ন্যাটো পাকিস্তানকে মেনে নিলে, পাকিস্তান তুরস্ককে মেনে নিবে আর তখন তালেবানও তুরস্কের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না।
সমৃদ্ধ তুরস্কের রূপকার এরদোগান
সমৃদ্ধ তুরস্কের রূপকার এরদোগান। তিনি তুরস্কের হাল ধরার পর বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে বেশ উন্নতি লাভ করেছে। দারিদ্র্য অবস্থা থেকে মানুষকে বের করে আনা হয়েছে। তিনি নিজেকে তুরস্কের নেতৃত্বের কাণ্ডারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যারা তাকে ভালোবাসে বরতে পারেন তারা তাকে তাদের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। আবার যারা তাকে ঘৃণা করে, তারা প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করেন।
ব্যাপক গ্যাস আবিষ্কার
তুরস্ক কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাসের এই বিশাল মজুদ আবিষ্কার করে। গত বছর তুরস্কের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ ফাতিহ কৃষ্ণ সাগরের পশ্চিমাঞ্চলে ৪০৫ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার করে। এটি ছিল তুরস্কের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। এরপর গত মাসে আরও কৃষ্ণসাগরে আরও ১৩৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আবিষ্কার করে। এরদোগানের সর্বশেষ তিন বছর শাসনামালে কৃষ্ণসাগর এলাকায় তুরস্কের গ্যাস আবিষ্কারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪০ বিলিয়ান ঘনমিটারে।
হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ উদ্বোধন
বাইজান্টাইন আমলে নির্মিত হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ। ১৯৩৪ সালে সাম্রাজ্যের পতনের পর মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক স্বাক্ষরিত এক ডিক্রিতে মসজিদটিকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়। এরদোগান স্থাপনাটি মসজিদে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। গতবছরের মে মাসে ইস্তাম্বুল বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে এরদোগান হাজিয়া সোফিয়াতে নামাজ আদায় করেন।
তাকসিম মসজিদ উদ্বোধন
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলোচিত তাকসিম স্কয়ারে একটি মসজিদ উদ্বোধন করেন এরদোগান। ২০১৩ সালে এখানে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে দেশটিতে তুমুল বিরোধিতা হয়। শেষ পর্যন্ত গত ২৮ মে তাকসিম মসজিদ উদ্ধোধন করেন এরদোগান। পরের দিন শুক্রবার মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি।
পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র
চলতি বছরেরে ১০ মার্চ তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় চুল্লির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরদোগান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভিডিও কনফারেন্সে তুরস্কের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর মের্সিনে প্রথম আক্কুয়ু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (এনজিএস) তৃতীয় চুল্লির ভিত্তি স্থাপন করেন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তুরস্কের প্রায় মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করবে।
ঐতিহাসিক শুশা শহরে ভ্রমণ
আজারবাইজানের শুশা শহরে ভ্রমণ করেন এরদোগান। গত ১৫ জুন তিনি নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শুশায় ভ্রমণ করেন। গতবছরের নভেম্বর মাসে আর্মেনিয়ার কাছ থেকে আজারবাইজান শুশা শহরটি পুনরর্দখল করে। শহরটি সংস্কৃতি ও কৌশলগত দিক দিয়ে উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আজারবাইজানের এই শুশা শহর দখলে তুরস্কের ড্রোনসহ সরাসরি সমর্থন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
ন্যাটো সদস্যের কাছে ড্রোন রপ্তানি
পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে তুরস্ক প্রথমবারের মতো পোল্যান্ডের কাছে ড্রোন রপ্তানি করতে যাচ্ছে। ন্যাটোর ওই সদস্য দেশটির কাছে ২৪টি সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করবে তুরস্ক। বেয়ারাক্তার টিবি২ নামের ড্রোনটি আগামী বছর পোল্যান্ডকে হস্তান্তর করবে তুরস্ক। এতে ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র যুক্ত করা হয়েছে।
গত তিন বছরে এরদোগান সাতটি বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এরমধ্যে কাতারে দুইবার, আজারবাইজানে দুইবার, কাতারে একবার, সাইপ্রাসে একবার এবং বেলজিয়ামে একবার। এছাড়া এরদোগান ন্যাটো সামিটসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামিটে অংশ নিয়েছেন।
তথ্যসূত্র
- নিউইয়র্ক টাইমস
- আনাদোলুর চিফ রিপোর্টার সরোয়ার আলমের বিশ্লেষণ
- আনাদোলু এজেন্সির বিশেষ রিপোর্ট
- ইয়ানি শাফাক
- বিবিসি বাংলা
- ডিডব্লিউ
- আল জাজিরা
- দৈনিক যুগান্তর