এস-৪০০ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকরি ও আধুনিক, বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। রাশিয়ার উৎপাদিত বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থার এই প্রযুক্তি পেতে আগ্রহী অনেক দেশ। বর্তমানে রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থায় আস্থা রেখেছে চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, ভারত, কাতারসহ বেশ কিছু দেশ। যদিও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এই নিবন্ধে আমরা জানবো এস-৪০০ কী? এস-৪০০ কিভাবে কাজ করে? রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কেন সবার এত আস্থা?
রাশিয়ার এস-৪০০ কী?
এস-৪০০ হলো ১৯৯০-এর দশকে নির্মিত উন্নত একটি বিমান-প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ন্যাটোর রিপোর্টিং নাম এসএ-২১ গ্রোলার। যা আগে এস-৩০০ পিএমইউ-৩ নামে পরিচিত ছিল।
এস-৩০০ পরিবারের উন্নত সংস্করণ হিসাবে রাশিয়ার আলমাজ সেন্ট্রাল ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা তৈরি করা হয় এস-৪০০। মূলত দেশটির আগেরকার এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে।
২০০৭ সাল থেকে এটি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এস-৪০০ তার কর্মক্ষমতা পূরণ করতে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে: এই চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হলো- খুব দীর্ঘ পাল্লার ৪০এন৬ (৪০০ কিমি), দীর্ঘ পাল্লার ৪৮এন৬ (২৫০ কিমি), মাঝারি পাল্লার ৯এম৯৬ই২ (১২০ কিমি) এবং সংক্ষিপ্ত পাল্লার ৯এম৯৬ই (৪০ কিমি)।
২০১৭ সালে দ্য ইকোনমিস্ট দ্বারা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালীকে ‘বর্তমানে নির্মিত সেরা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলির একটি’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এস-৪০০ এর ইতিহাস
এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালীর বিকাশ ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে শুরু হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ান বিমানবাহিনী দ্বারা সিস্টেমটি ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এর প্রথম সফল পরীক্ষা, আস্ট্রাকানের কাপাস্টিন ইয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালী ২০০১ সালে রাশিয়ান সেনাবাহিনী স্থাপন করা হয়।
২০০৩ সালে, এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সিস্টেমটি স্থাপনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আগস্ট মাসে, দু’জন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালী এস-৩০০ পি প্রণালীর ‘অপ্রচলিত’ ইন্টারসেপ্টরগুলির সাথে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এটি স্থাপনার জন্য প্রস্তুত নয়।
এস-৪০০ কিভাবে কাজ করে?
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, চারটি উপায়ে কাজ করে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি।
দ্বিতীয়ত, এস-৪০০ ব্যবস্থাটি লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করে এবং কমান্ড ভিহিকল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নির্দেশ দেয়।
তৃতীয়ত, উৎক্ষেপণ উপাত্ত ক্যারিয়ার রকেটে পাঠানো হলে এটি ভূমি থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
চতুর্থত, লক্ষ্যবস্তুর দিকে ক্ষেপণাস্ত্র যেতে সহায়তা করে সংশ্লিষ্ট রাডার।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবর বলছে, এস-৪০০ ব্যবস্থায় উন্নত রাডার যোগ করা রয়েছে। অন্যান্য যুদ্ধবিমানসহ স্টেলথ টার্গেট খুঁজে বের করতেই এই ব্যবস্থা। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতেও এস-৪০০ ব্যবহার করা যাবে।
এস-৪০০ কেন সেরা?
এস-৪০০’র রাডার, সেন্সর এবং মিসাইল একটি বিরাট এরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এর রাডারে ক্ষমতা প্রায় ৬০০ কিলোমিটার আর মিসাইলের ক্ষমতা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় একত্রে একাধিক লক্ষ্যে নজর রাখতে পারে। এছাড়া এটি এক মিনিটের মধ্যেই স্থান পরিবর্তন করতে পারে।
এটা এমন একটি সিস্টেম যা একের মধ্যে সব রয়েছে। এটি একত্রে দূরবর্তী, মধ্যবর্তী বা নিকটবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। এটি নির্ভর করে এর ব্যবহারের ওপর। এস-৪০০ যে কোনো দেশের জন্য উপযোগী। এই সিস্টেমটি স্থানান্তর বা চলাচলের জন্য যেমন কোনো জটিলতা নেই।
এ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় একটি যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ পোস্ট, তিনটি সমন্বয়কারী জ্যাম-প্রতিরোধী পর্যায়ক্রমিক অ্যারে রাডার, বিমানের লক্ষ্যমাত্রা শনাক্ত করা, ছয়-আটটি বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কমপ্লেক্স (১২টি ট্রান্সপোর্টার-লঞ্চার, একটি বহু-কার্যকরী চার আলোকসজ্জা ও শনাক্তকরণ রাডার) যুক্ত রয়েছে।
এছাড়া এটি একটি প্রযুক্তিগত সহায়তা ব্যবস্থা, একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহন যানবাহন ও একই সঙ্গে এটি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা।
এস-৪০০ -এ রয়েছে অতিরিক্ত শনাক্তকারী রাডার, টাওয়ার ও এন্টোনা পোস্ট যা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়া যায়। এই ব্যবস্থা একই সময়ে ৩৬টি লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এমনকি একই সময়ে ৭২টি মিসাইল ছুঁড়তে সক্ষম।
একনজরে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
এস-৪০০ এর প্রকার হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালী (পরিবহনযোগ্য)।
- এর উদ্ভাবনকারী রাশিয়া।
- এটির ব্যবহারকাল ২৮ এপ্রিল ২০০৭ থেকে বর্তমান।
- এর নকশাকারী হচ্ছে- আলমাজ-আনতে।
- এর উৎপাদনকারী হচ্ছে- ফ্যাকেল মেশিন-বিল্ডিং ডিজাইন ব্যুরো।
- প্রতিটির উৎপাদনের জন্য খরচ $৪০০ মিলিয়ন প্রতি ইউনিট (আর্টিলারি ব্যাটেলিয়ন)। যার মধ্যে ৮ লঞ্চার, ১১২ মিসাইল, কমান্ড এবং সাপোর্ট যানবাহন রয়েছে।
এস-৪০০ ব্যবহার করে যেসব দেশ
রাশিয়া
রাশিয়াতে সেপ্টেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত রুশ সশস্ত্র বাহিনীর কমপক্ষে ২৫টি রেজিমেন্টসহ ৫৭টি ব্যাটালিয়ন (বিভাগ) মোতায়েন করা হয়।
আলজেরিয়া
আলজেরিয়ায় আলজেরিয়ান বিমানবাহিনী এটি ব্যবহার করে। আলজেরিয়া সম্ভবত রুশ এস-৪০০ এসএএম ব্যবস্থা স্থাপন করা শুরু করেছিল।
বেলারুশ
বেলারুশে বেলারুশ সামরিক বাহিনী এটি ব্যবহার করে। ২০০৭ সালে দুটি এস-৪০০ ব্যাটালিয়নের জন্য আবেদন করা হয়। দুটি ইউনিট জুন ২০১৬ সালে সরবরাহ করা হয়।
চীন
গণচীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এস-৪০০ ব্যবহার করে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, ইউনিট সরবরাহের কাজ জানুয়ারী ২০১৮ সালে শুরু হয়।
তুরস্ক
তুরস্কে তুর্কি বিমানবাহিনী এস-৪০০ ব্যবহার করে। বিমান প্রতিরক্ষা কমান্ড, এস৪০০ গ্রুপ কমান্ড (আকুঞ্জী-আঙ্কারা), ১৫তম ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি কমান্ড (অগ্রিডাকি-ইস্তাম্বুল), ২০তম ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি কমান্ডে (বিরেসিক-ওরফে) ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্ভবত আনামুর-মেরসিন-এ আরও একটি ঘাঁটি স্থাপন করা হবে।
আয়রন ডোম কী? আয়রন ডোম কিভাবে কাজ করে?
ব্যবহার করবে ভারত
ভারত ভারতীয় সামরিক বাহিনী এস-৪০০ ব্যবহার করবে। অক্টোবর ২০১৮ সালে নতুন দিল্লীতে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সরকারী বৈঠকের সময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। $৫.৪৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির মধ্যে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে ৫টি রেজিমেন্ট সরবরাহ করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ব্যবহার করবে সৌদি আরব
সৌদি আরবে সৌদি আরবের সামরিক বাহিনী এস-৪০০ ব্যবহার করবে। অক্টোবরে ২০১৭ সালে, সৌদি বাদশাহ প্রথম সালমানের মস্কো সফরের সময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। $৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি চুক্তির মধ্যে সৌদি আরব স্থলবাহিনী জন্য স্থল সরঞ্জামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এস-৪০০ পেতে মরিয়া ভারত
২০১৮ সালে ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করে ভারত। এর অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে রাশিয়াকে প্রাথমিকভাবে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। এ বছরের শেষ নাগাদ মিসাইলের ব্যাটারির প্রথম সেট হাতে পাওয়ার আশা করছে ভারত।
ভারতের জন্য অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘এস-৪০০’ তৈরি শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। ভারত ৩৯০০০ কোটি টাকা খরচ করে এই অত্যাধুনিক এয়ারডিফেন্স সিস্টেমের ৫টি ইউনিট নিতে চাচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচটি ‘এস-৪০০’ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হবে। দূরপাল্লায় নিঁখুত নিশানায় সক্ষম এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আগামী দিনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশটি।
ঐহিত্যগতভাবে ভারত মূলত রাশিয়া থেকেই অস্ত্র কেনে। কিন্তু গত কয়েক বছরে দিল্লি যুদ্ধ হেলিকপ্টার, পরিবহণ বিমান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন এবং অন্যান্য সামরিক নজরদারি সরঞ্জামের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের দিকে ঘুরতে চাইছে।
ভারত রাশিয়ার মিগ যু্দ্ধবিমান এবং এসইউ-৩০ জেট তৈরি করে। এছাড়া দুই দেশ সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতের মাটিতে সুপারসনিক ‘ব্রাক্ষ্মোস’ ক্রুজ মিসাইলের উন্নয়ন ও উৎপাদনে কাজ করছে। ভারতের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে প্রতিপক্ষের আগ্রাসনের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। সেদিকেই মোতায়েন করা হতে পারে বিশেষ এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ।
রাশিয়ার এস-৪০০ কাতারে
নিরাপত্তার স্বার্থে কাতার সরকার যে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চেয়েছে, তা বিক্রির পরিকল্পনা থেকে সরছে না রাশিয়া। রাশিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র কাতারের কাছে বেচবে। রাশিয়ার নিজস্ব আগ্রহ আছে।
সৌদি আরবের অবস্থানের কারণে কাতারের কাছ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে আমরা পিছপা হব না। রাশিয়া তার অবস্থান থেকে সরে আসবে না। তবে আর ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করা হলেই কাতারে হামলার হুমকি দিয়েছিলেন সৌদি বাদশা সালমান।
এস-৪০০ -তেই আস্থা তুরস্কের
রাশিয়া থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ক্ষেত্রে আঙ্কারার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হবে না। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আগেই তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ব্যাসেলসে ন্যাটো জোটের শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই এই কথা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোগান বলেন, আমি বাইডেনকে বলেছি, এফ-৩৫ এবং এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তুরস্কের কাছ থেকে ভিন্ন কোনো পদক্ষেপ তাদের আশা করা উচিত হবে না।
কারণ এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান পাওয়ার জন্য আমাদের যা করণীয় তা আমরা করেছি এবং প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়েছি। ন্যাটো জোটের সদস্য দেশ হিসেবে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান পাওয়ার বিষয়টি বাতিল করবেন না।
ন্যাটো জোটভুক্ত প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার কাছ থেকে এস ৪০০ সংগ্রহ করছে তুরস্ক। ২০১৭ সালে এ ধরনের চারটি ব্যবস্থা কেনার জন্য মস্কোর সঙ্গে ৫২০ কোটি ডলারের চুক্তি করে আঙ্কারা। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সেগুলো সরবরাহ শুরু করেছে রাশিয়া, যে প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
তুরস্ক, ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলো এস -৪০০ কেনার ক্ষেত্রে অতি আগ্রহী হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো , আমেরিকা অস্ত্র বিক্রি করলেও প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে না, যা করে রাশিয়া। তাই সবার আগ্রহ রাশিয়ার দিকেই।
তুরস্কের এস ৪০০ কেনার কারণ
এস-৪০০ -এ সর্বাধুনিক আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা রয়েছে, যা ইতিপূর্বে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশ দিতে পারেনি। তুরস্ক, ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলো এস -৪০০ কেনার ক্ষেত্রে অতি আগ্রহী হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো , আমেরিকা অস্ত্র বিক্রি করলেও প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে না, যা করে রাশিয়া। তাই সবার আগ্রহ রাশিয়ার দিকেই।
তবে রাশিয়া থেকে শুধু প্রযুক্তিগত কারণে এসব দেশ এস-৪০০ কিনতে আগ্রহী এমনটি নয়। রাশিয়া থেকে এসব প্রযুক্তি কেনা মানে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী এবং দীর্ঘমেয়াদি করা।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কিনলেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
মার্কিন সরকার ২০১৭ সাল থেকেই রাশিয়ার কাছ থেকে তুরস্কের এস-৪০০ কেনা আটকানোর চেষ্টা করছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ক রাশিয়ার হাতে বিশাল অংকের অর্থ তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ন্যাটো জোটের সামরিক প্রযুক্তিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনলে তুরস্কের মতো নয়াদিল্লিকেও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। যদি ভারত রাশিয়া থেকে তার পরিকল্পনা মতো এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমদানি করে তাহলে তাকে তুরস্কের মতো একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।
ওয়াশিংটন বলছে, ২০১৭ সালে আমেরিকায় যে সামরিক বিষয়ক আইন পাস করা হয়েছে তা থেকে নয়াদিল্লি রেহাই পাবে না। মার্কিন ওই আইনে বলা হয়েছে- যেসব দেশ রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি কিনবে তাদের আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে হবে। ২০১৭ সালে যে আইন পাস হয়েছে তাতে কোন দেশকে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয় নি।
এস-৪০০ এর টুকিটাকি
১৯৯০ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি বিশ্বের অন্যতম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ তৈরি করে। ২০০৭ সালের ১ লা জুলাই রাশিয়ান আর্মড ফোর্স ইলেকট্রোস্টাল শহরের কাছে সর্বপ্রথম এস-৪০০ মিসাইল স্থাপন করে।
এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ কেবলমাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয়। এটি আসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ আকাশসীমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এতে ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রের লঞ্চিং প্যাড, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী গাড়ি, শক্তিশালী রাডার এবং স্বয়ংক্রিয় আক্রমণে প্রতিপক্ষকে বিপর্যস্ত করার সমস্ত রকমের বন্দোবস্ত।
এর রাডার এতটাই শক্তিশালী যে স্টেলথ্ ফাইটার অর্থাৎ গোপনে আক্রমণকারী যুদ্ধবিমানের হামলাকেও রুখে দিতে সক্ষম এই স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এর ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার। যে কোনও অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক মিসাইলেরও হামলা রুখে দিতে সক্ষম।
এই বিশেষ ব্যবস্থা একসঙ্গে ৩০০ টি টার্গেটে নজর রাখতে পারে।একসঙ্গে ৩৬ টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ৩৬টি আলাদা আলাদা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ৪.৮ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড এবং ১৭০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।
এস-৪০০ কে বর্তমানে সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র
- এনডিটিভি
- আনাদোলু
- উইকিপিডিয়া
- আলজাজিরা
- রয়টার্স
- টাইমস অব ইন্ডিয়া
- পার্স টুডে
- স্পুটনিক