কানাডায় নাজেহাল গুজরাট দাঙ্গার ইন্ধনদাতা মোদি

প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়ে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কালো তালিকা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলেও সাধারণ মানুষের ঘৃণা যেন প্রতিনিয়তই তাড়া করে ফিরছে মোদিকে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর আমেরিকায় সফরের ভিসা পাওয়া থেকে শুরু করে বহির্বিশ্ব সফরে নরেন্দ্র মোদিকে বেগ পেতে হচ্ছে না।

কিন্তু গুজরাট দাক্ষার প্রধান খলনায়ক নরেন্দ্র মোদি যে দেশেই সফরে যান সেখানেই সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়ছেন তার সেই কুকীর্তির জন্য।

সম্প্রতি জার্মানিতে এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। এর রেশ কাটতে না কাটতেই মোদিকে ফের একই পরিস্থিতির শিকার হতে হলো কানাডায়।

সবশেষ তিনদিনের সফরে ১৫ এপ্রিল বুধবার কানাডায় যান মোদি। সফরের শেষদিনে তাকে মুখোমুখি হতে হয় ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের। গুজরাট দাঙ্গার বীভৎসতার জন্যই কানাডার মানুষ তার বিরুদ্ধে এমন স্লোগান দেন এবং বিক্ষোভ করেন।

কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে প্রাচীনতম গুরুদ্বার দর্শনে গিয়েছিলেন মোদি। রস স্ট্রিট গুরুদ্বার ও সুরেতে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের সামনে বিক্ষোভকারীরা আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী আসতেই তারা মোদি বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করেন। তুলে ধরেন প্ল্যাকার্ড। এসব প্ল্যাকার্ডে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ নানা ইস্যু উঠে এসেছে।

ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জন এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তবে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হলেও রাস্তায় আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। আটকে দেয়া হয়েছিল রাস্তা।

বিক্ষোভকারীরা কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার বিরোধী স্লোগানও তোলেন। কয়েকদিন আগেই কানাডায় পাস হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী আইন। এই আইনটিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভে এই আইনের বিরোধিতাও করেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গুজরাটের গোধারায় একটি ট্রেনে আগুন দেয়াকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিরোধী ভয়াবহ দাঙ্গা উস্কে দেয়া হয়। কয়েক সপ্তাহব্যাপী ওই দাঙ্গায় ১২শ’র বেশি মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

গুজরাটের বাণিজ্যিক রাজধানী আহমেদাবাদের গুলবার্গ হাউজিং সোসাইটিতে হয়েছিল সবচেয়ে মারাত্মক ও নারকীয় ওই হত্যাকাণ্ড। সেখানে ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য এহসান জাফরিসহ অন্তত ৬৯ জন নিহত হয়েছিলেন।

উগ্রবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীরা তখন ৫৬৩টি মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া ওই দাঙ্গায় আড়াই লক্ষ মুসলমানকে গৃহহীন হতে হয়। ধ্বংসলীলায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় দশ হাজার কোটি রুপি।

২০০২ সালের ভয়াবহ ওই দাঙ্গার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে দায়ী করে ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং দাঙ্গার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মুসলিমরা।

তারা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি এ দাঙ্গা উস্কে দিয়েছিলেন। বরখাস্ত হওয়া ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা সঞ্জীব ভাট বলেছেন, দাঙ্গাকারীদের তৎপরতায় মোদী সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

এছাড়া মুসলিম হত্যার মাধ্যমে হিন্দুরা যাতে তাদের ক্রোধ প্রকাশ করতে পারে সে সুযোগ করে দেয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মোদী ২০০২ সালের এ দিনে পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও পুলিশ কর্মকর্তা ভাট অভিযোগ করেছেন।

ওই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের এক দশক পরও শত শত মুসলিম হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আজও নেয়া হয়নি।

২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গা নিয়ে জার্মানির একটি পার্লামেন্টারি দল এক দিনের গুজরাট সফর করেন। ওই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ঘিরে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়।

প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় তাকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

একইভাবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও সে এতদিন অবাঞ্ছিত ছিল এবং ২০০৫ সাল থেকে সবসময় তার ভিসা বাতিল করা হচ্ছিল।

তবে, যেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারকীয় মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা উস্কে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি, পরবর্তীতে তার সাথে মুসলমানদের জড়িত থাকার কোন প্রমান মেলেনি।

ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পেছনে কোনো অবস্থাতেই মুসলমানরা জড়িত ছিল না। এর নপথ্যে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

সংস্থাগুলোর মতে, গুজরাট রাজ্যে নিজেদের অবস্থান আরো মজবুত এবং ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে এ নাশকতামূলক কাজে বিজেপি ইন্ধন যুগিয়েছিল।

বিজেপি এ নাশকতামূলক কাজে ইন্ধন যোগালেও এ ঘটনার জন্য তারা মুসলমানদের দায়ী করে। এর ফলে হিন্দুরা উত্তেজিত হয়ে সংখ্যালঘু মুসলমানদের আক্রমণ করে বসে এবং সংঘটিত হয় হিন্দু মুসলিম ভয়াবহ দাঙ্গা।

ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এ অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি দায়ী করে।

Exit mobile version