কেনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে অন্তত ১৪৭ জনকে হত্যা করেছে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী আল-শাবাবের সদস্যরা।
কেনিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গারিসা ইউনিভার্সিটি কলেজ ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার এ হামলায় আরো অন্তত ৭৯ জন আহত হয়েছেন।ভোররাতের দিকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ক্যাম্পাসে ঢোকে বন্দুকধারীরা, যাদের শরীরে বোমা বাঁধা ছিল। মুসলিমদের বেছে বেছে মুক্তি দিয়ে খ্রিস্টান শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তারা।
চার জঙ্গি এ হামলা চালায় বলে কেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ কাইসারি জানিয়েছেন।
এর আগে ২০১৩ সালে নাইরোবির একটি বিপণীবিতানেও চার জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল, যাতে ৬৭ জন নিহত হয়েছিলেন।
“অভিযান শেষ হয়েছে। চার সন্ত্রাসীই নিহত হয়েছেন,” কেনিয়ার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন কাইসারি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে হামলাকারীরা ঢোকার পর ৫৮৭ জনের মতো শিক্ষার্থী পালিয়ে বেরোন। তাদের মধ্যে ৭৯ জন আহত হয়েছেন।কেনিয়ার পুলিশ প্রধান জোসেফ বোইনেট বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢোকার সময় ‘এলোপাতাড়ি’ গুলি ছুড়তে থাকে।
পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ক্যাম্পাসটি ঘিরে সারাদিন হামলাকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি করলেও বারবার পিছু হটে।
সোমালি সীমান্ত থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে গারিসা শহরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আল শাবাব।
বৃহস্পতিবার আল-শাবাবের মুখপাত্র শেখ আবদিআসিস আবু মুসাব বলেন, বন্দুকধারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ভেতরে খ্রিস্টানদের জিম্মি করে রেখেছে।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, “আমরা বেছে বেছে মুসলিমদের মুক্তি দিয়ে দিয়েছি।”
আল শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়।
নিজেদের দেশ সোমালিয়ায় জঙ্গি দমনে সেনা পাঠানোর বদলা হিসেবে এর আগেও কেনিয়ায় রক্তাক্ত হামলা চালিয়েছে তারা।
১৯৯৮ সালে একই দিনে কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা চালায় আল-কায়েদা। ওই হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবারের এ হামলার নিন্দা জানিয়ে আল শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেনিয়াকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ দমনে কেনিয়াকে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে জাতিসংঘ।
নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে নতুন পুলিশ নিয়োগ এবং তাদের দ্রুত প্রশিক্ষণের জন্য ‘জরুরি পদক্ষেপ’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা।“অযথাই আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘাটতিতে ভুগেছি,” বলেছেন তিনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দুকধারীরা ক্যাম্পাসে ঢুকেই শিক্ষার্থীদের মেঝেতে শুয়ে পড়তে বলে। এ সময় শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
ঘটনার বর্ণনায় এক শিক্ষার্থী বলেন, “পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। সব জায়গায় চলছিল গোলাগুলি।”
“ভোর ৫টার দিকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং ছেলেরা জীবন বাঁচাতে ছুটোছুটি করতে থাকে,” রয়টার্স টিভিকে বলেন নাম না জানা এক শিক্ষার্থী।
এ হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে মোহামেদ মোহামুদ নামের একজনকে ধরিয়ে দিতে দুই লাখ ১৫ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আল শাবাবের জ্যেষ্ঠ নেতা মোহামেদ কুনোও হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলে জানিয়েছে কেনিয়া সরকার। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৫৩ হাজার ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গারিসার একটি ইসলামিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কুনো। ২০০৭ সালে চাকরি ছাড়েন তিনি।