ট্রাম্পের পথেই নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের পথেই নেতানিয়াহু : বেনেটকে হামাসের হুশিয়ারি

নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে পরাজয় অস্বীকার করেছিলেন ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও চলছিলেন তার পথে। তিনি নতুন জোটের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বাগাড়ম্বর করে গেছেন। তিনি নতুন জোটের প্রচেষ্টাকে ইতিহাসে ‘বৃহত্তম নির্বাচনী জালিয়াতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ জোটকে তিনি ইসরাইলের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ডানপন্থি বেনেটের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারকে নেতানিয়াহু ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থক’ সমর্থিত ‘বিপজ্জনক বামপন্থি সরকার’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, যারা ইরানের মতো ইসরাইলের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম নয়।

কিন্তু শত চেষ্টা সত্ত্বেও ট্রাম্পের যেমন জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়েছিল, নেতানিয়াহুরও প্রধানমন্ত্রীর পদ নাফতালি বেনেটের কাছে ছেড়ে দিতে হয়েছে। যেন দুই বন্ধুর একই পরিণতি, একই পথের দুই পথিক যেন!

জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি বেনেটের

ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট জাতিকে একতাবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইয়েমিনা পার্টির এ নেতা বলেছেন, তার সরকার সব মানুষের জন্য কাজ করবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম কমানোই নতুন সরকারের অগ্রাধিকার হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।।

বেনেট ক্ষমতা নেওয়ার পর বলেছেন, “এটি শোকের দিন নয়। গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তন হয়, সেটিই হয়েছে।” ইসরাইলে কেউ যাতে আতঙ্কিত বোধ না করে সেজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন বেনেট। উৎসব না করার জন্য সমর্থকদের আহ্বান জানিয়ে বেনেট বলেন, “অন্যের বেদনার মধ্যে নাচানাচি করবেন না। আমরা শত্রু নই। আমরা এক জাতির মানুষ।”

ট্রাম্পের পথেই নেতানিয়াহু
নেতানিয়াহুরও প্রধানমন্ত্রীর পদ নাফতালি বেনেটের কাছে ছেড়ে দিতে হয়েছে

নয়া জোট, নয়া সরকার, নয়া রেকর্ড

ইসরাইলের ৭৩ বছরের ইতিহাসে বেনেটের জোটের মতো অতীতে কোনও সরকার দেখা যায়নি। জোটে থাকা দলগুলোর আদর্শগত ভিন্নতা রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো এই প্রথম ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের দল সরকার গঠনে অংশ নিচ্ছে। নতুন সরকারে রেকর্ড সংখ্যক আটজন নারী মন্ত্রী রয়েছে।

ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করল হামাস

ইসরাইলের ক্ষমতায় পরিবর্তনের কারণে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো ফিলিস্তিনি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। রোববার বিরোধী নেতা নাফতালি বেনেট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে প্রতিরোধ সংগঠনটি।

হামাসের অন্যতম নেতা ইসমাইল রিদওয়ান বলেন, ইসরাইলের ক্ষমতায় যে ব্যক্তিই আসুক তাকে সবার আগে হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। নাফতালি বেনেটকে জানতে হবে বন্দি বিনিময়ের সঙ্গে গাজা উপত্যকার ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার বা এই উপত্যকার পুনর্গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই।

দায়িত্ব নিলেন বেনেট মন্ত্রিসভার সদস্যরা

ইসরাইলে ইয়ায়ির লাপিদ ও নাফতালি বেনেতের জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট রিওভেন রিভলিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তারা।

আস্থাভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা নেসেটে তাৎক্ষণিকভাবে শপথ নেন। আগের সমঝোতা অনুযায়ী চার বছর মেয়াদের সরকারের প্রথম দফায় দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন নাফতালি বেনেত। ২০২৩ সালে শেষ দুই বছরের জন্য ইসরায়েলের নেতৃত্বের দায়িত্ব বেনেতের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন ইয়ায়ির লাপিদ।

ইসরাইলের নতুন সরকারে কে কোন পদে

জোটের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী পদে নাফতালি বেনেট এসেছেন। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী: নাফতালি বেনেট (ইয়ামিনা পার্টি)। হবু প্রধানমন্ত্রী/পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ইয়ার লাপিদ (ইয়েস আতিদ)। জোটের চুক্তি অনুযায়ী প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাবেন বেনেট। এর পর দায়িত্ব নেবেন ইয়ার লাপিদ।উপপ্রধানমন্ত্রী/প্রতিরক্ষামন্ত্রী: বেনি গান্টজ (ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট)। উপপ্রধানমন্ত্রী/বিচার বিভাগের মন্ত্রী: গিডেওন সার (নিউ হোপ)।

অর্থমন্ত্রী: অ্যাভিগডোর লিবারম্যান (ইসরাইল বেইতেনু)। শিক্ষামন্ত্রী: ইফাত শাসা-বিতুন (নিউ হোপ)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: আইলেট শাকেদ (ইয়ামিনা পার্টি)। স্বাস্থ্যমন্ত্রী: নিটজান হোরোওইটজ (মেরেটজ পার্টি)। পরিবহনমন্ত্রী: মেরেভ মিখাইল (লেবার পার্টি)। পরিবেশ সুরক্ষামন্ত্রী: তামার জ্যান্ডবার্গ (মেরেটজ পার্টি)। জননিরাপত্তামন্ত্রী: ওমর বার-লেভ (লেবার পার্টি)। যোগাযোগমন্ত্রী: ইয়াজ হেন্ডেল (নিউ হোপ)।

শ্রম, সামাজিক পরিষেবা ও সামাজিক বিষয়াদিবিষয়ক মন্ত্রী: মেইর কোহেন (ইয়েস আতিদ)। জ্বালানিমন্ত্রী: করিন এলহরার (ইয়েস আতিদ)। প্রবাসীমন্ত্রী: নাচমন শাই (লেবার)। গোয়েন্দা বিভাগের মন্ত্রী: এলাজার স্টার্ন (ইয়েস আতিদ)। পর্যটনমন্ত্রী: ইউয়েল রাজভোজভ (ইয়েস আতিদ)। ধর্মীয়বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী: মাথান কাহানা (ইয়ামিনা পার্টি)। সংস্কৃতি এবং ক্রীড়ামন্ত্রী: চিলি ট্রুপার (ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট)। কৃষিমন্ত্রী: ওদেড ফোরের (ইসরাইল বেইতিনু)।

নির্মাণ, নেসেটের সঙ্গে যোগাযোগবিষয়ক মন্ত্রী: জেভ এলকিন (নিউ হোপ)। আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়কমন্ত্রী: এছাওভি ফ্রেজ (মেরেটজ)। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী: ওরিত ফারকাশ হ্যাকোহেন (ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট)।সামাজিক সাম্যতাবিষয়ক মন্ত্রী: মীরাভ কোহেন (ইয়েস আতিদ)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী: হামেদ আমার (ইসরাইল বেইতেনু)। নেসেট স্পিকার: মিকি লেভি (ইয়েস আতিদ)। ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান: অ্যালেক্স কুশনির (ইসরাইল বেইতেনু)।

পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা কমিটি চেয়ারম্যান: রাম বেন বারাক (ইয়েস আতিদ)। আইন ও সংবিধান কমিটির চেয়ারম্যান: রাব্বি গিলাদ কারিভ (লেবার পার্টি)। আলিয়া ও প্রবাসীবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান: ইয়ার গোলান (মেরেটজ পার্টি)।

যেভাবে ক্ষমতায় এলো বেনেটের জোট

গত দুই বছরের মধ্যে চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ইসরাইলে। এবার যদি নতুন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিতে ব্যর্থ হতো, তবে ফের ভোট আয়োজন করতে হতো। নেসেটে ভোটাভুটিতে মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছে নাফতালি বেনেটের জোট। তার পক্ষে ৬০ ও বিপক্ষে ৫৯ ভোট পড়ে।

এভাবেই ইসরাইলে বিশেষ কথিত ‘কিং অব ইসরাইল বা ইসরাইলের সম্রাট’ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুগের অবসান ঘটল। ১২ বছর পর প্রধানমন্ত্রী পদে নেতানিয়াহুর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন নাফতালি বেনেট।রোববার রাতে নতুন জোট নেসেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর কট্টর নেতানিয়াহুর বিদায় নিশ্চিত হয়। এর মাধ্যমে দীর্ঘ এক যুগ পর ইসরাইলে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলো। নেতানিয়াহু এখন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।

বেনেট ইন, নেতানিয়াহু আউট
বেনেট ইন, নেতানিয়াহু আউট

বেনেট ইন, নেতানিয়াহু আউট

ইসরাইলে নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আরেক কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক নাফতালি বেনেট। ডান-বাম এবং মধ্যপন্থি সাতটি দলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন একটি কোয়ালিশন সরকারের শরিকদের মধ্যে শুক্রবার সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আগামী দুই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কট্টর জাতীয়তাবাদী দল ইয়ামিনার নেতা নাফতালি বেনেট। তার পর তাকে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে মধ্যপন্থি রাজনীতিক ইয়ার লাপিডের হাতে, যিনি নতুন এই কোয়ালিশন তৈরির মূল হোতা ছিলেন।

৪৯ বছরের নাফতালি বেনেট একসময় নেতানিয়াহুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে দুবছর তিনি নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে অবশ্য তার সঙ্গে নেতানিয়াহুর মনোমালিন্য তৈরি হয় এবং লিকুদ পার্টি থেকে বেরিয়ে তিনি কট্টর ইহুদি দল ‘জিউয়িশ হোম’ পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০১৩ সালে প্রথম এমপি হিসাবে নির্বাচিত হন।

কট্টর ডানপন্থি আদর্শ নিয়ে তার কোনো রাখঢাক নেই। বিভিন্ন সময় বড়াই করে তিনি বলেছেন নেতানিয়াহুর চেয়েও তিনি বেশি ডানপন্থি। অতিধার্মিক ইহুদিদের মতো অধিকাংশ সময়ে মাথায় কিপা (এক ধরনের টুপি) পরে থাকেন। উদারপন্থি ইহুদিদের সুযোগ পেলেই উপহাস করেন। বলতে গেলে বেনেট ইহুদি জাতীয়তাবাদ এবং জাত্যভিমানের এক প্রতীক।

ফিলিস্তিন নিয়ে বেনেটের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

ইসরাইলের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এখন দুটো প্রশ্ন সামনে চলে আসছে— নানা মত ও পথের সমন্বয়ে এই কোয়ালিশন আদৌ কতদিন টিকবে এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংকট নিয়ে নতুন এই সরকারের অবস্থান কী হবে? নাফতালি বেনেটের রাজনৈতিক আদর্শ, তার বিশ্বাস, ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে তার অতীতের বক্তব্য-বিবৃতি বিবেচনা করলে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ আপাতদৃষ্টিতে নেই।

যে সাতটি দলের কোয়ালিশনে শরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হলেন বেনেট সেখানে ইসলামপন্থি একটি আরব দল ছাড়াও মেরেতজের মতো বামপন্থি দল রয়েছে, যারা পশ্চিমতীরে ইহুদি দখলদারিত্বে ঘোরবিরোধী। কীভাবে নাফতালি বেনেটের মতো একজন কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিক এমন শরিকদের সঙ্গে হাত মেলালেন, তা নিয়ে বিস্ময় এখনও কাটেনি। তার দলের ভেতরেও এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তার বহু সমর্থক ক্ষুব্ধ।

ক্ষমতায় গিয়ে কি বেনেট তার এতদিনের আদর্শের সঙ্গে আপস করবেন? ভিন্ন পথে হাঁটবেন? অনেকে মনে করেন, দুটি ভীতির কারণে এই কোয়ালিশন হয়তো টিকে থাকতে পারে এবং বেনেটকে অনেক বিষয়ে নমনীয় হতে দেখা যেতে পারে।

প্রথম কথা বেনেট ও শরিকরা জানেন তাদের ভেতর মত-পার্থক্য চরমে গেলে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফিরে আসবেন। দ্বিতীয়ত এই শরিকে যোগ দিয়ে বেনেট নিজে বিরাট ঝুঁকি নিয়েছেন। তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। সুতরাং এই সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তা হলে ইসরাইলের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারেন বেনেট। ফলে সে ভয়েই তিনি আপস করবেন। আপস তাকে করতেই হবে।

ছোট ছোট দলে বিভক্ত বিভক্ত ইসরাইল

ইসরাইল ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে লিকুদ পার্টি থাকলেও দলের প্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হারাতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পদ। দলটি শেষ নির্বাচনে ৩০ আসন পেয়েছে।

প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেরুন র্যাপোপোর্ট বলেন, যে চরম মেরুকরণের উপর নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করছিলেন সে ঘৃণা-বিদ্বেষ আজ ডানপন্থিদের গিলে খাচ্ছে। যদি নেতানিয়াহু জোট সরকারকে ক্ষমতা নেওয়া থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হন তবে ইসরাইল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

অপর বিশ্লেষক অর্লি নয় বলেন, ন্যায়বিচার ব্যবস্থা এবং পুলিশসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সবকিছুই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ধ্বংস করে ফেলেছেন। এর অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের সবকিছুই চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছে। এখন আমরা তার কাজের ফল দেখতে পাচ্ছি।

মাঠ ছাড়বেন না নেতানিয়াহু

টানা ১২ বছর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দোর্দণ্ড এই প্রতাপশালী শাসককে সরাতেই জোট বেঁধেছেন বিরোধীরা। যে জোট অবশেষে নেসেটে আস্থাভোটে জয়ের মাধ্যমে সরকার গঠন করেছে। কিন্তু জোট সরকারকে যে শান্তিতে থাকতে দেবেন না নেতানিয়াহু তা আগেই পরিষ্কার ছিল। এবার তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন— প্রধানমন্ত্রিত্ব গেলেও রাজনীতি ছাড়ছেন না তিনি।

নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়লেও রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন। নেতানিয়াহু সমর্থকদের বলেন, তিনি লিকুদ পার্টির প্রধান এবং বিরোধী নেতা হিসেবে থাকবেন। এ ছাড়া পরেরবারের নির্বাচনে হবেন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।

সমর্থকদের তিনি বলেন- আমি আপনাদের এ ভয়ঙ্কর সরকারের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাব। সৃষ্টিকর্তার সহযোগিতায় এটা এত দ্রুত হয়ে যাবে, যা আপনাদের ভাবনারও বাইরে।

বিরোধীদলীয় নেতা নেতানিয়াহু

রোববার পার্লামেন্টে ভোটের সময় নীরব বসে ছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নতুন জোট সরকার অনুমোদন পাওয়ার পর বেনেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পার্লামেন্ট কক্ষ ছেড়ে যান তিনি। পরে কালো মাস্ক পরিহিত নেতানিয়াহু বিরোধী দলীয় নেতার আসনে গিয়ে বসেন।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০০৯ সাল থেকে টানা ১২ বছরসহ মোট ১৫ বছর পাঁচ মেয়াদে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে বিচার চলছে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

বেনেটকে অভিনন্দন বাইডেনের

বেনেট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ইসরাইলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ ও মজবুত করার অপেক্ষায় আছেন বলে ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী বেনেটকে অভিনন্দনবার্তায় জানিয়েছেন তিনি।

নেতানিয়াহু-বেনেটের মধ্যে পার্থক্য দেখছে না ফিলিস্তিনিরা

ইসরাইলের এই নতুন সরকার নিয়ে আশাবাদী না ফিলিস্তিনিরা। তারা বলছে, নেতানিয়াহু ও বেনেটের মধ্যে তারা কোনও পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন না।

বেনেট নিজেও উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা এ বিষয়ে নিজেকে নেতানিয়াহুর চাইতেও ‘কট্টর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন।

তথ্যসূত্র

  • বিবিসি
  • মিডল ইস্ট আই
  • মিডল ইস্ট আইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং এডিটর-ইন-চিফ ডেভিড হিয়ার্স্ট এর নিবন্ধ
  • জেরুজালেম পোস্ট
  • এপি
  • মিডলইস্ট মনিটর

 

Scroll to Top