তরুনীরা যে কারনে আইএসে আকৃষ্ট

101619_1পুরুষের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোর কিছুসংখ্যক নারীও জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়েছে। ধারণা করা হয়, সারা বিশ্ব থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ নারী ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় সংগঠনটিতে যোগ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কট্টর সুন্নি এই সংগঠনে নারীদের যোগ দেওয়ার সংখ্যা যেমন ধীরে ধীরে বেড়েছে, তেমনি স্পষ্ট হয়েছে ওই নারীদের মধ্যে কী অনুপ্রেরণা কাজ করেছে তাও। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নারীদের আইএসে যোগ দিতে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করেছে ‘দূরে সরিয়ে দেওয়া এবং কাছে টানার’ বিভিন্ন নিয়ামক।
দীর্ঘদিন থেকেই ধারণা করা হয়, আত্মপরিচয়ের সংকটের কারণে মুসলিম কিশোর-তরুণদের অনেকে চরমপন্থী ইসলামি সংগঠনের আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
চরমপন্থী দলের জন্য অতীতে সদস্য সংগ্রহ করেছে এমন বেশ কিছুসংখ্যক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, তাঁরা মা-বাবার রক্ষণশীল চিন্তাভাবনা এবং স্কুলের বন্ধুদের উদারনৈতিক ধারণার মাঝখানে আটকা পড়া কিশোর-তরুণদের মুক্ত করতে চান। তাঁরা তাঁদের একটি তৃতীয় পথের প্রস্তাব দেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাছে টানার নিয়ামকগুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করছে। এই নিয়ামকগুলো আগে কখনোই এত শক্তিশালী ছিল না। কাছে টানার জন্য আইএসের জঙ্গিরা অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোকে নিপুণভাবে ব্যবহার করছে। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের কার্যকলাপ ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করছে। বিশেষ করে নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে গড়ে তুলেছে জোরা ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি অন্য নারী জঙ্গিরাও এক বছরের বেশি সময় ধরে ইংরেজিতে ব্লগ এবং টুইটার বার্তা দিচ্ছে।
গত মাসে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে সহিংসতা দেখার ফলে নারীরা প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। সিরিয়া এবং ইরাকে যাওয়া ইউরোপের ছয়জন নারীর সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁদের একজন আইএসের হাতে জিম্মি মার্কিন সাহায্যকর্মী পিটার কাসিগের নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘দারুণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। আরেক নারী আরেকটি পৃথক শিরচ্ছেদের ভিডিও দেখে লিখেছেন, ‘ওই কাফেরের শিরচ্ছেদ দেখে আমি খুশি।’ তিনি আরও শিরচ্ছেদ করার আহ্বান জানান। আরেক নারী টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘জেনে রাখ, ইরাক এবং সিরিয়ায় আমাদের সেনা রয়েছে, রক্ত যাদের পানীয় এবং হত্যাযজ্ঞ যাদের খেলা।’
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইলিয়াম ফাউন্ডেশনের চার্লি উইন্টার বলেছেন, আইএসের প্রচারণায় অনেক সময় নারীদের সক্রিয়, এমনকি সশস্ত্র ভূমিকার কথা বলা হলেও বাস্তবতা হলো, নারীরা আইএসে যোগ দেওয়ার পর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েন।
আইএসের দীর্ঘ এক ইশতেহারের অনুবাদে সহায়তা করেন চার্লি উইন্টার। ওই ইশতেহারে নারীর স্বাধীনতাসহ নারীদের সম্পর্কে পাশ্চাত্যে প্রচলিত ধারণার তীব্র নিন্দা করা হয়। এতে বলা হয়, নয় বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হতে পারে। সেখানে স্পষ্টভাষায় আরও বলা হয়, আইএস যদি একেবারেই নির্ভরশীল না হয়, তবে নারীদের অস্ত্র তুলে নেওয়া উচিত নয়।
চার্লি উইন্টার বলেন, ওই ইশতেহারে যা রয়েছে তাতে চরমপন্থী নারীরা ছাড়া সবাই আহত হবে।

Scroll to Top