গত এপ্রিলে জো বাইডেনের আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের পরেই তালেবানরা দেশ দখল শুরু করে। মার্কিন সেনারা দেশে ফেরার কয়েকদিনের মধ্যেই তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন ও জর্জ ডাব্লিউ বুশের কঠোর সমালোচনা করেছেন আমেরিকার সাবেক প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সাথে ব্যাখ্যা করেন আফগানিস্তানে সেনা পাঠানোর আমেরিকার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে বলেন-
এটি আমাদের দেশের জন্য খুবই ভয়াবহ সময়। আমার মনে হয় না এর আগে কখনও আমাদের দেশকে এভাবে কেউ অপমান করতে পেরেছে।
আমি জানি না এর ব্যখ্যা কিভাবে করবো! এত দ্রুত কিভাবে একটা সামরিক বাহিনীর পতন ঘটে?
এখানে যা ঘটেছে এমন ঘটনা ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।
আমরা মনে করি এটা আমাদের জন্য অনেক বড় লজ্জার। আমাদের সম্মান ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের জন্য অনেক খারাপ হয়েছে। এটা আমার দেখা আমেরিকার জন্য সবচেয়ে অপমানজনক সময়।
আমার জানা মতে, রাশিয়া তাদের সেনাবাহিনীর জন্যে প্রতি বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। যেখানে আমরা আফগানিস্তানে ব্যয় করেছি প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার।
তালেবানদের থামিয়ে রাখতে আমরা প্রতি বছর ৪২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে গেছি গত বিশ বছর ধরে। সত্যিকার অর্থে বললে ২০ বছর নয়, এটি প্রায় সাড়ে ২১ বছর। যেখান থেকে আমরা কিছুই পাইনি। তাহলে এত বছর যাবৎ আমরা কী করেছি?
উপরন্তু সেই অর্থ ছিল বিভিন্ন দেশের।
আমি আপনাকে বলতে পারি যে- আমি এখন কাউকে অপমান করতে চাচ্ছি না। কিন্তু এই বিভিন্ন দেশের টাকা যেটা আমরা খরচ করেছি তারা যদি জবাবদিহিতা চায় তাহলে কী জবাব দেবো? তারপরেও যার খরচ ছিল হিসেব ছাড়া।
আমি সবাইকে একটা বিষয় জানাতে চাই যে, গত দেড় বছর ধরে আমরা কোনো সেনা হারাইনি। কারণ আমি বুঝতাম যে তাদের কীভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং সেটাই করেছিলাম।
আপনি চিন্তা করুন সিকাগো, নিউইয়র্ক, আমাদের দেশের বিভিন্ন শহরে কত মানুষ মারা যায়। কিন্তু আফগানিস্তানে আমাদের কোনো সৈন্য মারা যায়নি।
কারণ তারা জানতো যদি কেউ মারা যায় আমি এটা মেনে নেব না। আমি এটা খুব কঠোরভাবেই বলে দিয়েছিলাম।
ট্রাম্প জর্জ ডাব্লিউ বুশের যুদ্ধে জড়ানো প্রসঙ্গে বলেন, যিনি তালেবানদের সাথে যুদ্ধ বাঁধিয়েছিলেন তিনি জানতেন, তালেবানরা ভালো যোদ্ধা। তারপরেও আমাদের এ যুদ্ধে জড়ানো উচিৎ হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যে রাজত্ব করার জন্য সিদ্ধান্তটি ছিল একটি বোকামি। আমি জানি এর জন্য বুশ নিজেও খুশি নন।
আমি বিশ্বাস করি এ সিদ্ধান্তটি ছিল আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত। বর্তমানে সৈন্য ফিরে আনায় এমন রূপ নিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছি।
আপনি যদি ২০/২১ বছর আগের কথা চিন্তা করেন তখন ভালো প্রাধান্য ছিল আমাদের। বর্তমানে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে। এটা সত্যিই বোকামিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
যেখনে আমরা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছি সেখান থেকে আধিপত্যও হারিয়েছি। দু’দিক থেকেই আমাদের ক্ষতি হয়েছে। অন্য দিক থেকে আমাদের জন্য লাখ লাখ মানুষের প্রাণ গেছে। যে জন্য দায়ী আমরাই। নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছি।
বোকামিপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য কী হচ্ছে?
আপনি চিন্তা করলেই পাবেন যে, বর্তমানে যা যা ঘটছে।
আমরা ৪০ হাজার আমেরিকান সেনা পাঠিয়েছিলাম। সেখানে তারা তালেবানদের ধ্বংস করতে পারেনি। আমি বলতে বাধ্য যে, তালেবানরা খুবই ভালো যোদ্ধা, আমরাও তাদের ক্রেডিট দিতে বাধ্য। তাদের সাথে যদি ১ হাজার বছরও যুদ্ধ চালিয়ে গেলে, তারা তারপরও যুদ্ধ চালিয়ে যেত।
তালেবানরা এখন আফগানিস্তান দখল নিয়েছে। কে জানে তারা আমাদের সাথে সঠিক আচরণ করবে কি-না।
বাইডেন প্রশাসনের করা তালেবানদের সাথে চুক্তি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, বাইডেনের তালেবানদের সাথে চুক্তিতে যাওয়া ঠিক হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বর্ডারে দেয়াল তুলে দিয়েছি। বাইডেনও সে নীতিতে হাটতে পারতেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মাদক ও মানবপাচার বন্ধ করতে। আমরা বন্ধ করতে চাই আমাদের দেশের অবৈধ অনুপ্রবেশ। আফগানিস্তান থেকে আসা শুরু করেছে। তারা এখন তাদের জেলখানা খালি রাখতে আমাদের দেশ ব্যবহার করবে।