কাবুল, আফগানিস্তান : আফগান রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করার সময় সাংবাদিকদের মারধর ও আটক করার অভিযোগ আনা হয়েছে তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে দলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ইতিলাতরোজ পত্রিকার দুই সাংবাদিক – তাকি দরিয়াবি ও নেয়ামাতুল্লাহ নকদিকে বুধবার সকালে কাবুলের পশ্চিমে মহিলাদের একটি বিক্ষোভের খবর সংগ্রহের সময় তালেবানরা আটক করে।
সংবাদপত্রের আরও দুই সাংবাদিক – আবর শায়গান ও লুৎফালি সুলতানী – তাদের সহকর্মীদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পত্রিকার সম্পাদক কাদিম কারিমির সাথে থানায় ছুটে যান।
তারা বলেন, তারা থানায় পৌঁছালো তালেবান যোদ্ধারা তাদেরকে ধাক্কা মারে ও থাপ্পড় দেয় এবং মোবাইল ফোনসহ তাদের সমস্ত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে।
শায়গান আল জাজিরাকে বলেন, “কারিমি তার কথা শেষ করতে না করতেই একজন তালিবান সদস্য তাকে থাপ্পড় মারেন এবং বেরিয়ে যেতে বলেন।”
হোল্ডিং সেলে নির্যাতন
শায়গান বলেন, তিনজন লোককে ধরে নিয়ে একটি ছোট হোল্ডিং সেলে রাখা হয়। সেখানে রয়টার্স ও তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সির দুই সাংবাদিকও ছিলেন।
দরিয়াবি ও নকদিকে আলাদা কক্ষে রাখা হয়। তখন সেলের অন্যরা তাদের চিৎকার ও কান্না শুনতে পান। এমনকি ব্যথার কারণে কোনো এক নারীর কাতর অভিব্যক্তিও শুনতে পান তারা।
অনলাইনে সংবাদপত্রটির পোস্ট করা ছবিগুলিতে দেখা যায় গল্পের বাকি অংশ। তারা স্পষ্টভাবে শারীরিক প্রমাণ দেখিয়েছেন যে, উভয় ব্যক্তিকেই বেত্রাঘাত ও ক্যাবল দিয়ে মারধর করা হয়। দরিয়াবির পিঠ, পায়ের উপরের অংশ ও মুখে গভীর লাল ক্ষত দেখা যায়। নকদির বাম হাত, পিঠের উপরের অংশ, পায়ের উপরাংশ ও মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
“তাদের এতটাই মারধর করা হয়েছিল, তারা হাঁটতে পারছিলেন না। তাদেরকে বন্দুক দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, তাদের লাথি মেরেছিল, ক্যাবল দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, চড় মারা হয়েছিল ” শায়গান বলছিলেন।
তিনি বলেন, সহিংসতা এতই নৃশংস যে, নাকদি ও দরিয়াবী ব্যথা থেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।
কিন্তু শুধু সাংবাদিকদেরই এই ভাগ্যের মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি। শায়গান বলেন, একজন পুরুষ বিক্ষোভকারীকে তালেবান রক্ষীরা তাদের কক্ষে নিয়ে গিয়েছিল। স্পষ্টতই মনে হচ্ছিল তাকেও নির্যাতিত করা হয়েছে।
শায়গান বলেন, “তিনি হাঁটতে পারছিলেন না, অন্য সেলমেটদের একজনকে উঠে, তাকে সাহায্য করতে হয়েছিল।”
কঠোর সতর্কতা
যদিও পাঁচজনকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে শায়গান জানান যে, যাওয়ার আগে তাদেরকে একজন তালেবান কর্মকর্তা কঠোর সতর্কতা জারি করে বলেন- “এই বিক্ষোভকারীরা যা করছিল তা বেআইনি এবং এই ধরনের বিষয়গুলি আপনারা কাভার করে সবাই আইন ভঙ্গ করেছেন। আমরা এবার আপনাদের যেতে দিচ্ছি। কিন্তু পরের বার এত সহজে ছেড়ে দেওয়া হবে না। ”
যদিও সেই সময় বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ছিল না, কিন্তু, কয়েক ঘন্টার মধ্যে, তালেবানরা একটি ডিক্রি জারি করে। এতে বলা হয় যে, যেকোনো প্রতিবাদ সমাবেশ অবশ্যই বিচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
এই ঘটনা “ইসলামী আমিরাত” – সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে যে বিবৃতি দিয়েছে তার বিরুদ্ধে যায়।
১৭ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনে দলটির তৎকালীন মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছিলেন- “বেসরকারি গণমাধ্যম স্বাধীন হবে। তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে…। মিডিয়ার নিরপেক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা আমাদের কাজের সমালোচনা করতে পারে, যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি। ”
গত মাসের শেষের দিকে বিদেশি গণমাধ্যমের জন্য কর্মরত সাংবাদিকদের একটি সমাবেশে মুজাহিদ একই দাবি করেছিলেন। সেই সময়, মুজাহিদ সাংবাদিকদের স্বচ্ছ হতে এবং তালেবান পরিচালিত আফগানিস্তানে জীবনের বাস্তবতার প্রতিবেদন করতে উৎসাহিত করেছিলেন।
কিন্তু পরবর্তী সপ্তাহগুলিতে, আফগান সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও ও ছবিতে পূর্ণ হয়েছে। যাতে দেখা যাচ্ছে যে, তালেবানের সশস্ত্র যোদ্ধারা সাংবাদিকদেরকের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। তালেবানদের বিরুদ্ধে বারবার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই অভিযোগগুলি ভয় দেখানো, শারীরিক সহিংসতা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা ও মিডিয়াকর্মীদের আটক করা থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে মন্তব্য করার জন্য তালেবানদের পক্ষ থেকে এ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।