তুরস্কের উন্নয়ন এখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে। উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতি দেশটির। রজব তাইয়েব এরদোগানের নেতৃত্বে দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সবকিছু। তুরস্ক দৃঢ়ভাবে ডিজিটাল যুগকে গ্রহণ করছে, দুর্লভ ডিজিটাল অবকাঠামো বিকাশেও চেষ্টা করছে। দেশটি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নতিতে সচেষ্ট রয়েছে। উৎপাদন পদ্ধতিগুলোতেও আমূল পরিবর্তন আনছে।
যেভাবে হচ্ছে তুরস্কের উন্নয়ন
রজব তাইয়েব এরদোগানের নেতৃত্বে দেড় যুগ ধরে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে তুরস্ক। সেগুলোর মাধ্যমে তুরস্ক এগিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্যপানে।
৫ম প্রজন্মের স্যাটেলাইট
তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের যোগাযোগ স্যাটেলাইট (উপগ্রহ) তুর্কচাত ৫এ। মার্কিনভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি সংস্থা স্পেসএক্স -এর সহযোগিতায় স্যাটেলাইটটি ইতোমধ্যে ৩১তম মেরিডিয়ান পূর্বে প্রদক্ষিণও করেছে। ফলে দেশটির যোগাযোগের ক্ষমতা প্রসারিত হয়েছে।
তুর্কচাত ৫এ এর আগের যোগাযোগ উপগ্রহের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ক্ষমতা রয়েছে। নতুন উপগ্রহটি দেশের কক্ষপথের অধিকার রক্ষায় ৩৫ বছর ধরে কাজ করবে। মহাশূন্যে তুরস্কের সক্রিয় যোগাযোগ উপগ্রহের সংখ্যা এখন তুর্কচাত ৩এ, ৪এ এবং ৪বি এর পাশাপাশি ৫এ -সহ চারে পৌঁছেছে।
তুর্কচাত ৫বি নামে আরেকটি যোগাযোগ উপগ্রহের পরীক্ষা চলছে এবং এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের তথ্য ধারণ ক্ষমতা ১৫ গুণ বাড়বে। কক্ষপথে সক্রিয় তুরস্কের স্যাটেলাইটের সংখ্যা গোকতুর্ক-২ এবং রাসাত পর্যবেক্ষণ কক্ষপথসহ মোট সাতটি।
২০২২ সালে উৎক্ষেপণের জন্য পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের দেশীয় যোগাযোগ স্যাটেলাইট প্রকল্প তুর্কচাত ৬এ স্যাটেলাইটটির। তুর্কচাত ৬এ -এর মাধ্যমে তুরস্ক বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে একটি হবে, যারা নিজস্ব যোগাযোগ উপগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম।
মেগা প্রকল্প চ্যানেল ইস্তাম্বুল
বসফরাস প্রণালীর ওপর চাপ কমাতে মেগা প্রকল্প চ্যানেল ইস্তাম্বুল উদ্বোধন হয়েছে তুরস্কে। যার ফলে দেশটিতে উন্নয়নের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এই খাল দেশটির অর্থনীতিতে গতি নিয়ে আসবে। চ্যানেল ইস্তাম্বুল, বসফরাসের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক রক্ষার জন্য এবং এর আশপাশের নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। ভূমিকম্প হলেও প্রকল্পটি আবাসিক এলাকাগুলোকে সুরক্ষিত রাখবে।
১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ জন বিজ্ঞানীসহ মোট ২০৪ জন বিশেষজ্ঞ এই প্রকল্পে কাজ করেছেন। চ্যানেল ইস্তাম্বুলের জাহাজের ট্র্যাফিক বসফরাস থেকে ১৩ গুণ বেশি নিরাপদ হবে। মেরিনা, কন্টেইনার বন্দর ও লজিস্টিক সেন্টার, যা চ্যানেল থেকে কৃষ্ণ সাগরের প্রস্থানের ঠিক ডানদিকে অবস্থিত হবে। বিনোদন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি অঞ্চল কৃষ্ণ সাগরের প্রস্থানের বামে ইস্তাম্বুলের একটি বিশেষ মান যুক্ত হবে।
৫,০০,০০০ লোকের ধারণক্ষমতা নিয়ে চ্যানেলের দু’পাশে আবাসিক অঞ্চলগুলো নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, শহরের কেন্দ্রস্থলের চাপ সরিয়ে দেবে। এই প্রকল্পটি কেবল তুরস্কেই নয়, পুরো বিশ্বে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ছয় বছরে প্রকল্পটি শেষ হবে।
চ্যানেল ইস্তাম্বুলের মধ্য দিয়ে যাওয়া জাহাজগুলো থেকে প্রাপ্ত আয় এবং বন্দরসহ অন্যান্য উপাদানগুলোর থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়েই এই প্রকল্পের অর্থায়ন হবে। সজলাইডের ব্রিজ চ্যানেল ইস্তাম্বুলের উপরে নির্মিত ছয়টি সেতুর মধ্যে একটি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫ কিলোমিটার (২৮ মাইল), ন্যূনতম প্রস্থের ২৭৫ মিটার (৯০২ ফুট) এবং গভীরতা হবে প্রায় ২১ মিটার (৬৯ ফুট)।
তুর্কি ড্রোনে বিস্ময়কর সাফল্য
যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দিচ্ছে তুরস্কের ড্রোনগুলো। দেশটি তাদের সামরিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুল সংখ্যক ড্রোন নির্মাণ করছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি বায়কার টেকনোলজিসের তৈরি দামি ও কার্যকর ড্রোনগুলো যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিই বদলে দিয়ে বিশ্বজয় করেছে।
এ বায়রাখতার টিবি-২ ড্রোন যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের অবস্থান সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য দিতে পারে। আক্রমণ পরিচালনার জন্য চারটি মিসাইল বহন করতে পারে। ২০২০ সালে এ ড্রোনগুলো যে তিন দেশে ব্যবহৃত হয়েছে সেখানকার প্রতিপক্ষ বাহিনীর ট্যাংক, আর্মড ভেইকল, গোলা-বারুদের গুদাম ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
ফলে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোতেও তুরস্কের ড্রোনগুলোর চাহিদা বেড়েছে। তুর্কি ড্রোন কিনেছে পোল্যান্ড আর কিনতে যাচ্ছে লাটভিয়া। নাগোর্নো কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে আজারবাইজান। আর্মেনিয়াকে পরাজিত করে কারাবাখ দখলে নিতে আজারীয় সেনাবাহিনীকে চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছে দিতে যে যুদ্ধাস্ত্র সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে সেটি হচ্ছে তুরস্কের নির্মিত ড্রোন।
আর্মেনিয়ার কয়েকশ’ ট্যাংক তুর্কি ড্রোন থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শুধু তাই নয় এ ড্রোনগুলো সিরিয়া ও লিবিয়াতে মোতায়েন করা রাশিয়ার ব্যয়বহুল ও শক্তিশালী পানসির বিমানবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিয়েছে।
আরতুগ্রুল গাজীর নামে ভাসমান গ্যাস টার্মিনাল
উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা তুর্কি বীর আরতুগ্রুল গাজীর নামে ভাসমান ‘গ্যাস টার্মিনাল’বানাচ্ছে তুরস্ক। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভাসমান টার্মিনাল এবং একইসাথে পুনঃগ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) নির্মাণ করেছে দেশটি।
তুর্কিদের পূর্বপুরুষ ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজীর পিতা আরতুগ্রুল গাজীর নামে নির্মাণ করা নৌটার্মিনালটি ইতিমধ্যে ব্যবহার শুরু হয়েছে। তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তবর্তী দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা হাতায়ের দোরতয়োল বন্দরে ভাসমান টার্মিনালটি নোঙর করা হয়েছে। এটির দৈর্ঘ ২৯৫ মিটার এবং প্রস্থ ৪৬ মিটার এবং উচ্চতা অন্তত ৬৩ মিটার।
এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ বহন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস পরিশোধনকারী জাহাজগুলোর একটি, যা প্রতি ২৪ ঘন্টায় অন্তত ২৮ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। এ সক্ষমতা তুরস্কে সরবরাহকৃত মোট গ্যাসের প্রায় ৮.২ শতাংশ।
এরদোগানের নেতৃত্বে সফল তুরস্ক
রজব তাইয়েব এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসেন তুরস্কের একেপি পার্টির এই নেতা। বন্ধু দেশ এবং প্রতিবেশি দেশগুলোও এখন তুরস্ককে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। গ্রেট এবং শক্তিশালী তুরস্ক নির্মাণের প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে কাজ করছে এরদোগান।
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধে তুরস্ক সরাসরি আজারবাইজানের পক্ষ নিয়ে তাদেরকে বিজয়ী করেছে। সিরিয়া ও ইরাকে কখনো আসাদ বাহিনী, কখনো কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে তুরস্ক। লিবিয়ায় তারা থামিয়ে দিয়েছে ফ্রান্স ও রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহী জেনারেল হাফতারের বাহিনীকে। এছাড়া তুর্কি সেনারা গ্রিস, গ্রিক-সাইপ্রাস ও মিসর এবং ইরাকি কুর্দিদের বিরুদ্ধেও সফলতা পেয়েছে।
ইসলামি অর্থনীতির অগ্রনায়ক তুরস্ক
ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তুরস্ক নেতৃত্বের স্থান দখলে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আর সেটা করতে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামিক ইকোনোমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সের মতো বিভাগ খোলা হচ্ছে। দেশটির বৃহৎ ঋণদাতা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে।
তুরস্কের বৈশ্বিক ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অগ্রনায়ক হতে চায়। তবে ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শুধুমাত্র ইসলামিক ব্যাংকিং নয়। ইন্সুরেন্স, কোষাগার ব্যবস্থাপনা, হিসাব রক্ষণ এবং লেনদেন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অংশ।
অর্থনৈতিক চক্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত আবেদন, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইসলামি বিনিয়োগ ফান্ড এবং ইসলামি অনুভূতিসম্পন্ন মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠান বাড়াচ্ছে দেশটি।
অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে ফিলিওস ভ্যালি প্রজেক্ট
অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ করতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে তুরস্ক। নতুন পরিকল্পনার মধে্য রয়েছে ফিলিওস ভ্যালি প্রজেক্ট। এ প্রজেক্টের আওতায় অর্থনৈতিক অঞ্চল, বন্দর, রেল ও অন্যান্য পরিবহন সুবিধা রয়েছে। ফিলিওস ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন হচ্ছে তুরস্কের প্রথম মেগা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। প্রায় ৬০০ হেক্টর জায়গা রয়েছে এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে।
যখন ফিলিওস বন্দরের কাজ সম্পূর্ণ হবে তখন এটি শুধু মারামারা সাগরের বন্দরগুলো এবং এ প্রণালীর ওপর চাপ কমাবে তা নয় এটা মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি কৃষ্ণসাগর এলাকার অঞ্চলগুলোতে রেলপথে বাণিজ্যও নিশ্চিত করবে।
বেসরকারি খাতের নেতৃত্বে এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন উদ্ভাবনী এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ডিজাইন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ফিলিওস ভ্যালি প্রজেক্ট উৎপাদন, রপ্তানি এবং এ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কৃষ্ণসাগরে বিপুল তেল-গ্যাসের সম্ভাবনা
তুরস্ক চলতি বছর অথবা ২০২২ সালের শুরুর দিকে কৃষ্ণসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এর আগে তুরস্ক সাকারিয়া গ্যাসক্ষেত্রে ৫৪০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার করে। সাকারিয়া গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২০২৩ সালে মূল গ্রিডে গ্যাস নেওয়ার পরিকল্পনা করছে আঙ্কারা। কূপ এলাকা থেকে মূল গ্রিডে গ্যাস নেওয়ার জন্য প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে দেশটি।
সম্প্রতি আমাসরা-১ কূপে ১৩৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার করা হয়। এ আবিষ্কারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন সুবাতাস বইবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে তুরস্কের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ ফাতিহ কৃষ্ণ সাগরের পশ্চিমাঞ্চলে তুনা-১ কূপে ৪০৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাসের সন্ধান পায়। এটি ছিল তুরস্কের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। ফলে রিজার্ভ গিয়ে দাঁড়ায় ৫৪০ বিলিয়ন কিউবিক মিটারে। এটা প্রচুর সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল।
তুরস্কের করকুট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
তুরস্কের তৈরি বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘করকুট। ‘করকুট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি একটি নিম্ন উচ্চতার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। আধুনিক যুদ্ধবিমানের হুমকি প্রতিরোধ করতে পারবে করকুট ক্ষেপণাস্ত্রটি।
এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে, ভূমি থেকে বিমানবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে খুবই কার্যকরী। এই ক্ষেপণাস্ত্রটিতে তিনটি ৩৫ এমএম গান সিস্টেম রয়েছে। পাশাপাশি একটি কমান্ড পোস্টও রয়েছে। যেখান থেকে এটি স্বতন্ত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
১০ সেকেন্ডেই করোনা শনাক্ত করবে তুরস্ক
মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই মানবদেহে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস শনাক্তের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন তুরস্কের একদল বিজ্ঞানী। বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ডিভাইসটির নাম দেওয়া হয়েছে ডায়াগনোভির।
ন্যানোটেকনোলজি-ভিত্তিক এই প্রযুক্তি ৯৯ শতাংশ নির্ভুল ফলাফল প্রদানে সক্ষম। এরই মধ্যে এটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ। সরকারি অনুমোদন পাওয়ায় ডিভাইসটির ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদন শুরু করে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
ডায়াগনোভির নামের নতুন উদ্ভাবিত ডিভাইসটি প্রচলিত পিসিআর টেস্টের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এটি ব্যবহার করে পরীক্ষা করলে মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হবে। যাদের শরীরে করোনা ভাইরাস নেই তাদের ক্ষেত্রে অবশ্য ফলাফল পেতে কিছুটা বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হবে।
কয়েক বছর ধরেই ন্যানোটেকনোলজির ওপর গবেষণা চালিয়ে আসছেন ন্যাশনাল ন্যানোটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা। বায়োসেন্সর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে নাসিকারন্ধ্রের বদলে মুখ থেকে নমুনা নেওয়া হবে।
জার্মানির চেয়ে শক্তিশালী তুরস্ক!
জার্মানিতে ড্রোন হামলা হলে দেশটির সেনাবাহিনী সেই ড্রোন হামলা ঠেকাতে সক্ষম হবে না। জার্মানির প্রতিরক্ষা ইনস্টিটিউটের আধুনিক যুদ্ধবিদ্যা বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাইকেল কার্ল বলেন, মারাত্মকভাবে বলতে গেলে, যদি জার্মান সেনাদের আজারবাইজানের ওই যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হতো, তাহলে তারা দাঁড়াতেই পারতো না।
তিনি বলেন, আজারবাইজান যুদ্ধে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, এমন কম্বাট ড্রোন এবং কামিকাযি ড্রোন হামলা হলে জার্মানির সেনাবাহিনী কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে না। আমাদের সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষার ঘাটতি আমাদের সর্বনাশের কারণ হবে।
জার্মানির ওই সমরবিদ বলেন, আধুনিক যুদ্ধে জিততে হলে জার্মান সেনাদের প্রযুক্তি প্রয়োজন। জার্মান বাহিনীতে প্রযুক্তি থাকলেও সেসব প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করে না। কামিকাযি হলো একধরনের আত্মঘাতী বিমান- যেগুলো বিস্ফোরক অস্ত্রে সজ্জিত থাকে এবং লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত করে নিজেই বিস্ফোরিত হয়ে যায়। এটা ড্রোন প্রযুক্তির নিখুঁত উন্নতি। শুধু আমাদের সেনাবাহিনীকে রক্ষা করলে হবে না, বেসামরিক নাগরিকদেরও রক্ষার কথা ভাবতে হবে।
তুরস্কে ২০ টন স্বর্ণের রিজার্ভ আবিষ্কার
তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের আগ্রি প্রদেশে ২০ টনের একটি স্বর্ণের রিজার্ভ আবিষ্কার করা হয়েছে। যার মূল্য ১.২ বিলিয়ন ডলার। একই অঞ্চলে ৩.৫ টনের একটি রূপার রিজার্ভও আবিষ্কার হয়েছে। যার মূল্য ২.৮ মিলিয়ন ডলার। ১৬০ মিলিয়ন ডলারের সুবিধা সম্পন্ন এই সংস্থায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ৫০০ কর্মচারী কাজ করছে এবং ২ হাজার কর্মসংস্থান রয়েছে।
আর এটি তুরস্ক এবং অত্র অঞ্চলের অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আগামী ২০২২ সালের শেষ নাগাদ এই স্বর্ণের খনি থেকে সম্পদ উত্তোলন শুরু করা হবে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিম মারমারা অঞ্চলে তুর্কি সার উত্পাদক গুব্রেটাস কর্তৃক ৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের স্বর্ণ আবিষ্কার হয়েছিল।
তুরস্ক ও এশিয়াকে যুক্ত করে রাশিয়ার খাল প্রকল্প
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার হয়ে তুরস্ক ও মধ্য এশিয়ার মধ্য দিয়ে একটি নৌ-পথ তৈরির পাশাপাশি, উত্তর ককেশাসের মধ্য দিয়ে একটি নতুন খাল ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে বিবেচনা করছেন। এজন্য তিনি দুবাই ভিত্তিক একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
এই ইউরেশিয়া খাল নির্মাণ প্রকল্পটি সর্বশেষ আর্মেনিয়ান-আজারবাইজানীয় লড়াইয়ের ফলে পরিবর্তিত ককেশাসের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে হ্রাস করবে এবং সেই সাথে, এশিয়া ও ইউরোপকে সংযুক্ত করার জন্য চীনের ‘বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভ’র অংশীদার হিসাবে রাশিয়ার ভূমিকা বৃদ্ধি করবে।
গত ২২ মে প্রায় ৪শ’ মালবাহী জাহাজের মালিক দুবাই-ভিত্তিক পিঅ্যান্ডও লজিস্টিক ইস্তাম্বুল ও মধ্য এশিয়ার মধ্য দিয়ে কৃষ্ণ সাগর এবং ভলগা-ডন খালের মতো ক্যাস্পিয়ান থেকে কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান পর্যন্ত রাশিয়ান অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে মালবাহী জাহাজগুলোর জন্য নতুন একটি নৌপথ খোলার ঘোষণা দেয়।
তথ্যসূত্র
- ডেইলি সাবাহ
- আনাদোলু এজেন্সি
- ইয়ানি সাফাক
- এল পেরিওডিকো
- লে মনডে
- টিআরটি
- রয়টার্স
- দ্য জেম্সটাউন ফাউন্ডেশন