নিজার বানাত

নিজার বানাতকে ফিলিস্তিনিদের শেষ বিদায়, আব্বাসের পদত্যাগ দাবি

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কট্টর সমালোচক নিজার বানাতকে বিদায় জানাতে পশ্চিম তীরের হেবরনের ওয়াসায়া আল-রসুল মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। শুক্রবার তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।

বৃহস্পতিবার পুলিশ হেফাজতে মাহমুদ আব্বাস সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত নিজারের মৃত্যু হয়। সেদিনই এ অধিকারকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে রামাল্লায় বিক্ষোভ হয়। সেখানে হামলা চালায় পুলিশ।

নিজারকে বিদায় জানাতে আসা ফিলিস্তিনিরা মসজিদে ‘গদি ছাড়ো আব্বাস, গদি ছাড়ো’, ‘মানুষ এ সরকারকে চায় না’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন।

বানাতকে বিদায় দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার কন্যা। যিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

বাবাকে বিদায় দেওয়ার সময় বানাতের কন্যা কান্নারত কণ্ঠে বলছিলেন, বাবা, আমায় ছেড়ে যেও না। আমি গ্র্যাজুয়েশন গাউন পরে আছি-এমনটা তোমাকে দেখাতে চেয়েছিলাম। এখন আমাকে কে খাইয়ে দেবে? কে আমাকে পড়াবে?

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় বানাতকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেয়। গ্রেফতারের কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যুর খবর জানায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসক সামীর জারৌর প্রাথমিক ময়নাতদন্তের ওপর ভিত্তি করে বলেন, বানাতের শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

বৃহস্পতিবার রামাল্লাভিত্তিক মানবাধিকার সম্পর্কিত স্বাধীন কমিশন এক সংবাদ সম্মেলনে ময়নাতদন্তের এ রিপোর্ট প্রকাশ করে।

চিকিৎসক সামীর বলেন, বানাতের মাথার, ঘাড়ে ও কাঁধে আঘাত ছিল। পাশাপাশি পাঁজর ভেঙে গেছে। ফুসফুসে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছিল তার। এর অর্থ হলো— ভুক্তভোগী গুরুতর কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি।

কে এই নিজার বানাত?

নিজার বানাত পশ্চিম তীরের আল-খলিল শহরের বাসিন্দা ছিলেন। ৪৩ বছর বয়সী বানাত একজন পরিচিত সমাজকর্মী।  তিনি ফিলিস্তিন সরকারের দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করতেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস কর্তৃক ফিলিস্তিনের দীর্ঘ প্রতিক্ষিত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া, যেটি গত মে মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন চুক্তি নিয়ে বেশ সরব ছিলেন তিনি।

এ বছর ফিলিস্তিনে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তাতে অংশ নেয়ার কথা ছিল নিজারের।

ইহুদিবাদী ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীর শাসন করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রচুর অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ। নিজার বানাত এর বিরোধিতা করে থাকেন।

তিনি বিদেশি শক্তিগুলোকে এই অর্থায়ন বন্ধের আহবান জানিয়ে আসছিলেন। নিজার বানাতের অভিযোগ ছিল- এই অর্থ ব্যবহার করে ফিলিস্তিনের সরকার কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে উঠছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।

মৃত্যু নিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানায়, বানাতকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা জানানো হয়নি।

এদিকে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতেয়াহ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য আইনমন্ত্রী মোহাম্মদ শালালদেহের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না ফিলিস্তিনিরা।

নিজার বানাতের পরিবার

নিজার বানাতের পরিবার যা বলছে

নিজারের কাজিন ২১ বছর বয়সী হুসেইন বানাত জানান, রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যখন ঘরের দরজা ও জানালা ভাঙছিলেন তখন সেই শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। সে সময়  বানাতের ওপর আঘাত করতে থাকে পিএ বাহিনী। জানালা ভাঙার জন্য যে লোহা ব্যবহার করেছিল সেটি দিয়েই তারা বানাতকে আঘাত করতে থাকে। টানা আট মিনিট ধরে এভাবে চলতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শী পরিবারের আরেক সদস্য বলেন, যখন আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন নিজার বানাত জীবিত ছিলেন এবং আঘাতের কারণে চিৎকার করছিলেন।

সূত্র : আলজাজিরা, মিডল ইস্ট আই

Exit mobile version