ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে হু হু করে। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই সংখ্যাটা ৭৫৮ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে নেপাল প্রশাসন সূত্রে খবর। তারা আরও জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। আহতের সংখ্যা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। তবে সংখ্যাটা হাজারের কম নয়।
ভূমিকম্পে শনিবার সকালেই কেঁপে ওঠে গোটা নেপাল। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে-র (ইউএসজিএস) এক কর্তা জানিয়েছেন, রিখটার স্কেলে ওই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮। এর পরেও বেশ কয়েক বার কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। ভূমিকম্পের আঁচ পড়ে ভারত-সহ পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং চিনেও। কম্পনের উত্সস্থল কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে লামজুং। কম্পনের জেরে নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠমান্ডু। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইউনেস্কো-র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পাওয়া কাঠমান্ডুর দরবার স্কোয়্যার সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কাঠমান্ডুর মুখ্য আকর্ষণ ধারারা মিনারও ভেঙে পড়েছে। সেখানে আটকে পড়েন বহু পর্যটক। ঘন বসতিপূর্ণ এই শহরে প্রচুর বাড়ি ভেঙে পড়ে। বেশ কিছু রাস্তায় দেখা দেয় গভীর ফাটল। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র কাঠমান্ডুতেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিকম্পের উত্সস্থল লামজুং আদতে পোখরা উপত্যকার মধ্যে পড়ে। সেখানে ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাতে গিয়ে নেপাল পুলিশের এক মুখপাত্র কমল সিংহ বান বলেন, ‘‘কম ঘনবসতিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পোখরায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু গোর্খা জেলাতেই ১০-১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।’’ ওই এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট ভাবে জানানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে, তথ্য জোগাড়ের চেষ্টার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পৌঁছনোর চেষ্টা করছে বলে তার দাবি। কাঠমান্ডুতে ১৯ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক ধারারা মিনার ভেঙে পড়ায় আটকে পড়েন শ’খানেক পর্যটক। বছর দশেক আগে ওই মিনারটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই মিনারের ন’তলায় ছিল একটি ব্যালকনি। এখান থেকে গোটা শহরকে সুন্দর ভাবে দেখা যেত। কিন্তু, কম্পনের জেরে গোটা মিনারটি ভেঙে পড়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সেখান থেকে দেহ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। ভূমিকম্পের জেরে গোটা দেশের অবস্থা খুবই খারাপ চেহারা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালের তথ্যমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজাল। বিপর্যয় মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি সামলাতে বিপর্যয় মোকাবিলায় দক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাহায্য এই মুহূর্তে বড়ই প্রয়োজন।’’
উৎসস্থলকাঠমান্ডু থেকে ৭৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গভীরতাভূপৃষ্ঠ থেকে ১৪.৮ কিলোমিটার গভীরে তীব্রতারিখটার স্কেলে ৭.৮ কারণএই অঞ্চলে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট উত্তর দিকের ইউরেশিয়ার প্লেটের তলায় ঢুকে যাওয়া (সাবডাকশন)