“৫ মার্চ সিউলে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্ক লিপার্টের উপর হামলা করেছিল দুই-কোরিয়া একত্রিকরণ আন্দোলনের কর্মী কিম কে জুং (৫৫)”।
এই খবর এখন বেশ পুরনো হলেও এটাকে কেন্দ্র করে মশা মারতে কামান দাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এই হামলার জন্য পরোক্ষভাবে উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর পাশাপাশি নিন্দা জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গুয়ন হে।
ইতোমধ্যেই হাসতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরেছেন রাষ্ট্রদূত মার্ক। ডাক্তাররা বলেছেন মুখের ব্যথা সম্পূর্ণ সারতে আরো কিছদিন সময় লাগবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্ঠে মনে হচ্ছে সেই ব্যথা যেন গিয়ে জমা হচ্ছে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায়।
এই হামলাকে উত্তর কোরিয়ার সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবেই দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এর প্রতিশোধ হিসেবে সীমান্ত এলাকায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে কোরীয়-মার্কিন যৌথ বাহিনী।
দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তার ইস্যুকে পুজি করে সীমান্ত এলাকায় মাঝারি ও দূরপাল্লার এন্টি-ব্যালাস্টিক মিসাউল ঞঐঅঅউ (ঞবৎসরহধষ ঐরময অষঃরঃঁফব অৎবধ উবভবহংব যার রেঞ্জ হচ্ছে ২০০ (কি.মি.) মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে কোরিয়া টাইমস পত্রিকা।
ক্ষমতাসীন সেনুরি পার্টির বেশিরভাগ নীতিনির্ধারক বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বলে এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে পত্রিকাটির বৃহস্পতিবারের সংখ্যায় ।
তবে চীনের আপত্তির কারনে এই সিদ্ধান্ত কার্য্যকর করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
এক রেডিও সাক্ষাৎকারে যেমনটি বলছিলেন আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এবং কোরিয়ার একত্রি করণ কমিশনের প্রধান মিস্টার কিয়ং গুয়ন, “আমরা এন্টি-ব্যালাস্টিক মিসাইল ঞঐঅঅউ মোতায়েনের পক্ষে। কিন্তু সরকারকে অনুরোধ করবো , কাজটি করার আগে চীনকে আস্থায় নিয়ে আসতে”।
কারণ উত্তর কোরিয়া এবং চীনের আপত্তির পর বিরোধপূর্ণ সীমান্ত চলছে মাসব্যাপী কোরিয়া-মার্কিন সামরিক মহরা।
রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অবস্থায় সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঞঐঅঅউ এন্টি- ব্যালাস্টিক মিসাইল মোতায়েন হবে অনেকটা আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার নামান্তর। ফলে ভেস্তে যেতে পারে দুই কোরিয়া একত্রিকরণ প্রক্রিয়া কিংবা শান্তি আলোচনাও।
কোরীয় উপদ্বীপকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এশিয়-প্রশান্ত অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি।
যেমনটি বলছিলেন বিরোধী দলের সমর্থক বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক উ হিয়ন রি, “আমি মনে করি রাষ্ট্রদূতের উপর হামলা একটি নিন্দনীয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই ঘটনাকে রাজনীতি করণ ঠিক হবে না। আর এই মূহুর্তে সীমান্তে শক্তিশালী এন্টি-ব্যালাস্টিক মিসাইল মোতায়েন করার অর্থই হলো শান্তি আলোচনাকে কফিনবন্দি করা। এতে করে একত্রিকরণ সমর্থকদের মধ্যেও নতুন করে হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায়ও ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।”
তার এই বক্তব্যের সত্যতা মিলল পুলিশ প্রধানের কথায়। দুইদিন আগে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন যে এখন থেকে সকল দূতাবাস এবং কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। কূটনীতিকগণ কোন কাজে দূতাবাসের বাইরে গেলে তাদেরকে পুলিশ প্রটেকশান দেয়া হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
এদিকে লিপার্টের উপর হামলার ঘটনায় তদন্তকারী দলের প্রধান এবং উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা কিম কি ছল গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন যে, হামলাকারী জুং হামলার আগে একাধিক উত্তর কোরিয় গুপ্তচরদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ।
এখন সময়ই বলে দিবে রাষ্ট্রদূত মি. লিপার্টের গাল থেকে যেটুকু রক্ত ঝরেছে তা দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি কতটা লাল করতে পারে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা।