হঠাৎ বদলে গেল সিরিয়ার ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের দৃশ্যপট। বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। রোববার সকালে (স্থানীয় সময়) সিরিয়া এখন মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে দেশটির বিদ্রোহীরা। এর পরপরই আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে।
এরই মধ্যে কিছু প্রশ্ন দাগ কাটছে সবার মনে। এখন কি হবে? কি ঘটতে যাচ্ছে দেশটিতে? বিভক্ত সিরিয়ার মসনদে বসছেই বা কারা?এমন প্রশ্নই ঘুরছে বিশেষজ্ঞ মহলে। বিশ্বজুড়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যদিও সিরিয়ায় ক্ষমতার শূন্যতা কীভাবে পূরণ হবে তা এখনো অস্পষ্ট। তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। বিবিসি।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো ব্যাচেগা লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট আসাদের বিদায়ে বহু মানুষ খুশি। কিন্তু এরপরই একটি প্রশ্ন নিশ্চিতভাবে আসে যে এরপর কী হবে। এদিকে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো ঐক্যবদ্ধ নয় এবং তাদের মধ্যে পূর্বের বিভেদ এবং আন্তঃকলহ রয়েছে।
এবারের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসলামপন্থি বিদ্রোহী হিসাবে পরিচিত হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস)। যাদের রুট আল-কায়েদা। বহু বছর ধরেই নিজেদের জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসাবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছে দলটি। তবে অনেকেই এটা মানতে রাজি নন। অনেকের মতে গোষ্ঠীটি এখনো চরমপন্থি সহিংস একটি সংগঠন এবং সে কারণেই এরপর দেশটিতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
যদিও গোষ্ঠীটির নেতা অন্যান্য সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন তারা তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেবেন না। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সিরিয়া আরও বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। কারণ সেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য একে অপরের সঙ্গে লড়াই করবে। ইতোমধ্যে অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে আপাতত, সিরিয়ার ভেতরে এবং বাইরে থাকা অনেক মানুষ একটি নতুন আশা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ।
সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন এক পালাবদল এনে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্যেও বদল আসবে নিশ্চিতভাবেই।
এর ফলে ইরান, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, লেবানন, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাজনীতি নতুন রূপ নেবে। তবে এটি ইরানের জন্য হবে বড় ধরনের আঘাত হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। কারণ, সিরিয়া ইরানের অন্যতম মূল্যবান মিত্র ছিল। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইরান সরকার সিরিয়া নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
তবে আল আসাদের পতনের পর ইরানিরা বুঝে গেছে যে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে হিজবুল্লাহকে দেওয়া মারাত্মক আঘাত এবং আসাদ সরকারের পতনের পর তাদের যা অবশিষ্ট আছে সেটি হলো তাদের পারমাণবিক প্রকল্প।
তাদের সামনে শিগগিরই একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পারমাণবিক প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নাকি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি করে চার বছরের জন্য স্থিতিশীলতা এবং ইসরাইলি আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা পাওয়া।
এদিকে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের পর এখন তার ভবিষ্যৎ গতিপথের হিসাব পুনরায় কষছে এবং বর্তমানে দক্ষিণ লেবাননে অস্ত্র মজুত রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
হিজবুল্লাহর অন্যতম সমর্থক সিরিয়ায় আল আসাদের পতনের ফলে তাদের সামরিক ও অন্যান্য বস্তুগত সহায়তা তুলনামূলক বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিরিয়ায় সরকারের পতন সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপন্থি সুন্নি অক্ষের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে। বিদ্রোহীদের গতি অর্জন করার উচ্চাকাঙ্খা সিরিয়ার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে সিরিয়ার চলমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া-তুরস্কের নামও জড়িয়ে রয়েছে। সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামসকে (এইচটিএস) সরাসরি সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক।
এ বছরের শুরুতে সিরিয়ার সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল তুরস্ক। কিন্তু সিরিয়া থেকে তুরস্কের বাহিনী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সিরিয়া কোনো আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়েছে।