দিল্লিতে ২০১২তে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া একজন ধর্ষণকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য কীভাবে টেলিভিশন তথ্যচিত্র নির্মাতারা অনুমতি পেলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তার তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
পার্লামেন্টে আজ ওই তথ্যচিত্রটির সমালোচনা করে মি সিং আরও জানিয়েছেন, বিবিসি ও ভারতের চ্যানেল এনডিটিভি-র জন্য প্রস্তুত ওই তথ্যচিত্রটি ভারতে দেখানোর অনুমতি দেওয়া হবে না।
দিল্লির একটি আদালত থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতি বা সেটির বিরুদ্ধে ইনজাংকশনও পেয়ে গেছে, যার ফলে ভারতের কোনও চ্যানেলেই ছবিটি দেখানো যাবে না।
ইন্ডিয়া’স ডটার নামে ওই তথ্যচিত্রটির নির্মাতা লেসলি আডউইন অবশ্য জানিয়েছেন, ওই ধর্ষণকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তিনি কারা বিভাগ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই অনুমতি পেয়েছিলেন।
বিবিসি স্টোরিভিল অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি এই তথ্যচিত্রটি আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সম্প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল।
ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে সেটি এখন ভারতে আর দেখানো যাবে না, তবে ৮ মার্চ ব্রিটেনে সেটি প্রচার করার পরিকল্পনা থেকে বিবিসি সরে আসেনি।
তথ্যচিত্রটিতে লেসলি আডউইন ২০১২-র গণধর্ষণের ঘটনায় অন্যতম ধর্ষণকারী মুকেশ সিংয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্যচিত্রটির নির্মাতা লেসলি আডউইন
সেখানে জেলের ভেতরে বসে ওই ব্যক্তি নিজের কাজের জন্য কোনও অনুশোচনা তো দেখানইনি, বরং ধর্ষণে বাধা দেওয়ার জন্য ধর্ষিতা তরুণীকেই দোষ দিয়েছেন।
কিন্তু ওই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। এরকম সাক্ষাৎকার নেওয়া আদৌ উচিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে কার্যত দুভাগ হয়ে যায় ভারতীয় মিডিয়া।
‘টাইমস নাও’ নামে একটি জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল এই তথ্যচিত্রটির সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিবিসি ও এনডিটিভি-র বিরুদ্ধে সরাসরি প্রশ্ন তোলে।
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা লিখেছে, বহু মানুষই ধর্ষণকারীর ওই অবমাননাকর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন – আর সে কারণেই সরকার তথ্যচিত্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এদিন পার্লামেন্টে বলেন, দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে কেউ বাণিজ্যিক মুনাফা করবে – সরকার তা হতে দেবে না।
তবে রাজ্যসভার সদস্য ও শিল্পপতি আনু আগা বলেছেন, তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করাটা কোনও সমাধান নয়। তাঁর মতে, ওই ধর্ষণকারী যা বলেছে ভারতে বহু পুরুষই তা বিশ্বাস করেন।
আর একজন এমপি ও বিখ্যাত কবি-গীতিকার জাভেদ আখতারও মনে করছেন, ‘ছবিটা বানিয়ে আসলে খুবই ভাল কাজ হয়েছে – কারণ ভারতে কতজন পুরুষ ওই ধর্ষণকারীর মতোই ভাবেন সেটা হয়তো এতে জানা যাবে!’
সূত্রঃ বিবিসি