বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সামরিক শক্তি

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সামরিক শক্তি

বিশ্বের কোন দেশের সামরিক শক্তি কতটুকু, সে বিষয়ে প্রতিবছর একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার।

২০২৪ সালেও প্রতিষ্ঠানটি ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সামরিক শক্তি সম্পর্কেও একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যার দিক থেকে মিয়ানমারের তুলনায় বেশ এগিয়ে থাকলেও সামরিক দিক থেকে তালিকায় সামান্য পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তিতে মিয়ানমারের অবস্থান যেখানে ৩৫ তম, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭ তম।

তালিকা তৈরি করার সময় দু’দেশের সৈন্যসংখ্যা, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান-সহ ৬০টিরও বেশি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, সামরিক ক্ষেত্রে দু’দেশের কার সক্ষমতা কতটুকু?

সৈন্য সংখ্যা

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের সৈন্য সংখ্যা বেশ বেশি রয়েছে।

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্যের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার। সেখানে মিয়ানমারের বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্য রয়েছে প্রায় দেড় লাখের মতো।
এছাড়া আধা-সামরিক বাহিনীতেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে।

দেশটিতে প্রায় ৬৮ লাখের বিশাল এক আধা-সামরিক বাহিনী রয়েছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারের আধা-সামরিক বাহিনীতে সদস্য রয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার।

তবে মিয়ানমারের ২০ হাজার রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে। বাংলাদেশের এ ধরনের কোনো ফোর্স নেই।

প্রতিরক্ষা বাজেট

মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট দ্বিগুণেরও বেশি।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, বছরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাখাতে ব্যয় হয় ৬৯৯ কোটি মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের বাৎসরিক প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার।

যুদ্ধবিমান

প্রতিরক্ষা বাজেটে এগিয়ে থাকলেও মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশে কম সংখ্যক যুদ্ধবিমান রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে ২১৬টি বিমান রয়েছে, যেখানে যুদ্ধ বিমান রয়েছে ৪৪টি।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর কাছে মোট বিমান রয়েছে ২৯৩টি, যার এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫৮টি।

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে বিশেষ যুদ্ধবিমান রয়েছে চারটি। অন্যদিকে, মিয়ানমারের কাছে এ ধরনের যুদ্ধবিমান রয়েছে পাঁচটি।

এছাড়া মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর কাছে ৮০টি হেলিকপ্টার রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের কাছে হেলিকপ্টার রয়েছে ৭৩টি।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার না থাকলেও মিয়ানমারের রয়েছে ৯টি।

বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক ট্যাঙ্ক রয়েছে মিয়ানমারের

ট্যাঙ্ক

বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক ট্যাঙ্ক রয়েছে মিয়ানমারের।

দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে বর্তমানে ৭০৫টি ট্যাঙ্ক রয়েছে বলে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে ৩২০টি ট্যাঙ্ক।

সামরিক যান

ট্যাঙ্কের সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও অন্যান্য সামরিক যানের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে ১৩ হাজারেরও বেশি সামরিক যান রয়েছে।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে আট হাজারের কিছু বেশি সামরিক যান।

কামান

কামানের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার।

দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে দুই হাজারেরও বেশি কামান আছে, যার মধ্যে ২১৫টি স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে ৪৬৪টি কামান রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে মাত্র ২৭টি।

এছাড়া মোবাইল রকেট প্রজেক্টরের সংখ্যাতেও মিয়ানমারের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

মোবাইল রকেট প্রজেক্টর হচ্ছে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সামরিক অস্ত্র, যেটি দিয়ে এক সাথে কয়েকটি রকেট বোমা নিক্ষেপ করা যায়।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে ৫৮০টিরও বেশি রকেট প্রজেক্টর রয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে মোবাইল রকেট প্রজেক্টর রয়েছে মাত্র ৭১টি।

নৌ-শক্তি

নৌ-শক্তিতেও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের হিসেবে, দেশটির নৌ-বাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের মোট ৩৬২টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে যুদ্ধজাহাজ রয়েছ ১৯০টি।

এক্ষেত্রে ফ্রিগেট ও কর্ভেটের মতো যুদ্ধজাহাজের সংখ্যায় মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমারের ছয়টি ফ্রিগেট থাকলেও বাংলাদেশের রয়েছে সাতটি।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের তিনটি কর্ভেট যুদ্ধজাহাজের বিপরীতে বাংলাদেশের রয়েছে ছয়টি।

এছাড়া মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট এবং বাণিজ্যিক নৌযানের দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

তবে সাবমেরিনের সংখ্যায় আবার মিয়ানমার এগিয়ে রয়েছে।

দেশটির নৌবাহিনীর কাছে এখন পর্যন্ত তিনটি সাবমেরিন রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে সাবমেরিন রয়েছে দু’টি।

যদিও মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কারো কাছেই বিমান ও হেলিকপ্টারবাহী কোনো রণতরী নেই।

সূত্র: বিবিসি

Scroll to Top