হজরত ঈসা আ. -কে মুসলিম ও খ্রিস্টান দুই ধর্মালম্বীরাই বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টানরা তাকে যিশু বলে সম্বোধন করে থাকেন। তিনি ছিলেন খ্রিস্টানদের নবী ও রাসুল। তাকে মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয়ে বিশ্বাস করলেও বিশ্বাসে রয়েছে বড় ধরনের পার্থক্য। আমরা আজকে জানবো ঈসা আ. সম্পর্কে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিশ্বাসের প্রধান ৯টি পার্থক্য।
৯.
মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে, হজরত ঈসা আ. ঐশ্বরিকভাবে হযরত মরিয়ম আ. -এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন। যে বিষয়ে কুরআনে বর্ণনা রয়েছে।
কিন্তু খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন যে, ঈসা আ. প্রভুর পুত্র বা Son of God। তাদের বিশ্বাস তিনি কোনো ঐশ্বরিক বা অলৌকিক নয়। মুসলমানদের বিশ্বাস আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। তার কোনো সন্তান নেই।
৮.
মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হলো- যিশু প্রভু কি প্রভু নন। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যিশু প্রভুর সন্তান। তাই তিনিও একজন প্রভু। কিন্তু মুসলমানদের বিশ্বাস যে যিশু একজন মানুষ। আর মানুষ কখনও প্রভু হতে পারে না।
৭.
যিশুকে নিয়ে কুরআনে যে ঘটনা উল্লেখ আছে, সেখানে বলা হয়েছে- তিনি তার জন্মের পরেই কথা বলেছিলেন। তা নিয়ে খ্রিস্টানদের অবিশ্বাস। কুরআনের ১৯ নম্বর সুরার ২৯ ও ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ঈসা আ. যখন পিতা ছাড়া জন্মগ্রহণ করেন, তখন তাকে নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছিল, তারা বললো, কিভাবে একটি শিশু কথা বলবে? যে কি-না কিছুক্ষণ আগেই ভূমিষ্ট হয়েছে। তখন ঈসা আ. বলে ওঠেন, আমি আল্লাহর একজন বান্দা, আমাকে তিনি শাস্ত্র দিয়েছেন এবং নবীরূপে প্রেরণ করেছেন।
কিন্তু খ্রিস্টানরা এ ঘটনা বিশ্বাস করে না। তারা বলে, শিশুকালে এমন কিছু ঘটা কখনোই সম্ভব না।
৬. এরপরে যে পার্থক্যটি রয়েছে সেটি হলো তার নাম নিয়ে। কুরআনে তার নাম ঈসা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনে ঈসা নামটি ২৫ বার বর্ণিত হয়েছে।
আর রাজা জেমস যে বাইবেল সংকলন করেছেন, সেখানে ৯৩৭ বার যিশু শব্দটি উল্লেখ আছে। তারপরেও আরো অনেক জায়গায় নামটি ব্যবহার হয়েছে। অর্থের দিক এবং সরাসরি উল্লেখ করলে দেখা যা ৯০০-১৩০০ বার ব্যবহার হয়েছে। যে কারণেই খ্রিস্টানরা যিশু নাম ব্যবহার করে এবং মুসলিম ধর্মগ্রন্থে ঈসা ব্যবহার করায় মুসলমানরা ঈসা নাম ব্যবহার করে।
৫.
ক্রুশবিদ্ধকরণ নিয়ে খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে ভিন্নধর্মী মতামত রয়েছে। মুসলমানরা ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন না। কুরআনে সুরা নিসার ১৫৭ ও ১৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণনা রয়েছে, তারা বলে (কফেররা) আমরা মরিয়মের পুত্র আল্লাহর বার্তাবাহককে হত্যা করেছি। কিন্তু তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি, তিনি ক্রুশবিদ্ধও হননি।
তার সাদৃশ্যের অন্য কাউকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল। যারা তার সম্পর্কে মতভেদ করছিল, তারা নিশ্চয়ই তার সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল। তাদের এ সম্পর্কে শুধু অনুমান করা ছাড়া কোনো জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি। আল্লাহ তাকে তার কাছে তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
কিন্তু খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
৪. হজরত মুহাম্মদ সা. আসার পূর্বাভাস নিয়ে মতদ্বৈততা। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তায়ালা ঈসা আ. -এর ইঞ্জিল কিতাবে শেষ নবী সম্পর্কে স্পেশাল মেসেজ দিয়েছেন। এই বার্তা তাওরাত কিতাবেও দেওয়া আছে।
কিন্তু খ্রিস্টানদের মতে যিশু বলেছেন- তারপরে একজন আসবেন। তবে তাদের বিশ্বাস- তিনিও প্রভু হবেন, নবী মুহাম্মদ সা. নন।
৩. মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে ঈসা আ. আল্লাহ তায়ালার বান্দা এবং একজন শিক্ষক। কুরআনে তার অনেক অলৌকিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি নিজে ঈশ্বর নন বরং মানবজাতির জন্য আল্লাহর করুণা।
কিন্তু খ্রিস্টানরা শুধু অলৌকিক ঘটনাই নয়, বরং স্বয়ং ঈসা আ.-কে ঈশ্বর বলে মনে করেন।
২. মুসলিম এবং খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা উভয়ই বিশ্বাস করে যে, ঈসা আ. আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। কিন্তু এ নিয়ে দুই ধর্মের দু’ধরনের মতামত রয়েছে।
মুসলমানরা মনে করেন- ঈসা আ. পুনরায় পৃথিবীতে আসবেন এবং ইসলাম ধর্মের সত্যতার ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে মুসলিম হবেন এবং সকল ধর্মের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করবে। পৃথিবীতে অন্য কোনো ধর্ম থাকবে না। ঈসা আ. পৃথিবীতে ৪০ বছর শাসন করবেন। তিনি ইমাম মাহদীর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালকে পরাভূত করবেন।
কিন্তু খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, যিশু ফিরে আসবেন, তাকে সবাই দেখতে পাবেন। সকল জান্নাতি তার সাথে পৃথিবীতে চলে আসবেন। এরপর পৃথিবীতে যারা ধার্মিক থাকবেন প্রত্যেকেই যিশুর সাথে আাকশে চলে যাবেন। মানে তারা সবাই জান্নাতে যাবেন।
১. যিশু কী বলেছেন, নিজের সম্পর্কে? মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে অনেকে বিতর্ক সভা হয়েছে যে যিশু ঈশ্বর ছিলেন কি ছিলেন না!
খ্রিস্টানরা বিভিন্ন যুক্তি দেন যে, যিশু নিজেকে প্রভু বলেছেন, কিন্তু সরাসরি কোথাও তার এমন কথার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, প্রভু একজন। আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র প্রভু।